নিজের দাম বোঝাচ্ছেন তপু

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পাকিস্তানকে হারিয়ে এসে কথায় কথায় আটখানা হাসি হাসছিলেন তপু বর্মণ। নির্মল সেই হাসিতে বোঝার উপায় নেই মাঠে কতটা মারমুখো হয়ে থাকেন তিনি। দলের সহকারী কোচ যিনি কিনা দলের ডিফেন্স অর্গানাইজেশন দেখারও মূল দায়িত্বে, সেই স্টুয়ার্ট পল ওয়াটকিসের চোখে তপুর মূল শক্তির জায়গাই হলো তাঁর আক্রমণাত্মক মনোভাব, ‘এর জোরেই ও স্ট্রাইকারদের সামলাতে ভয় পায় না। এই কারণেই প্রতিপক্ষ বক্সের মধ্যেও সে অপ্রতিরোধ্য।’

বয়স কতই বা, ২৩ ছাড়িয়েছেন মাত্র। ডাচ কোচ লোডউইক ডি ক্রুইফের হাতে এক ঝাঁক তরুণ খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়েছিল নেপাল সাফের পর। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে তপুর নিজেকে চেনানো তখন থেকেই। স্টপার ব্যাক পজিশনে খুব দ্রুত ‘তরুণ প্রতিভার’ তকমা ঝেড়ে ফেলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন দলে। যে কারণে এরই মধ্যে ২৩ ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তাঁর। মোহামেডানের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে শেখ রাসেল হয়ে ঢাকা আবাহনীতেও খেলে ফেলেছেন। জাতীয় দল এবং আকাশি-নীল জার্সিতে তাঁর নির্ভরতা দেখে নতুন ক্লাব সাইফ স্পোর্টিং গত মৌসুমে রেকর্ড ট্রান্সফারে তাঁকে দলে নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ডিফেন্ডারের পেছনে ৫৮ লাখ টাকা খরচ বিস্ময় জাগালেও তপুর সামর্থ্য নিয়ে কেউ সন্দেহ করেননি। যদিও সাইফে সময়টা কেটেছে হতাশায়।

ক্লাবের অভিযোগ অর্থের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেননি এই ডিফেন্ডার। লিগ ম্যাচে একাধিক এবং টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে এএফসি কাপেও তাঁর লাল কার্ড দেখায় যারপরনাই হতাশ ছিলেন সাইফের কর্মকর্তারা। কিন্তু জাতীয় দলে তাঁর পারফরম্যান্স দেখুন। এমন বাজে একটা মৌসুম কাটিয়ে এসেছেন কে বলবে! এশিয়ান গেমসে তিন সিনিয়র খেলোয়াড়ের একজন হিসেবে জেমি ডে’র দলের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন তিনি। এশিয়াডের পর সাফেও খেলছেন আক্রমণাত্মক অথচ নিখুঁত ফুটবল। বাংলাদেশ দলের এত দিন যে মাথাব্যথা ছিল বক্সের আশপাশে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রিকিক উপহার, জেমির এই দলে সেই প্রবণতা নেই বললেই চলে। এশিয়াডে চার ম্যাচ খেলেছেন, সাফেও খেলে ফেলেছেন দুই ম্যাচ। তাঁর মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে গোলের পর ওই জার্সি খোলার কারণে শুধু একবার হলুদ কার্ড দেখেছেন, লাল কার্ড তো দূরের কথা। তবে কি সাইফই জহরতের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেনি? লাল-সবুজ জার্সিতে কিন্তু তপু দেখাচ্ছেন তিনি সত্যিই কতটা দামি।

ওয়াটকিস বলছিলেন দলের ডিফেন্ডারদের ফাউল করার প্রবণতা কমেছে অর্গানাইজেশন ঠিকঠাক হওয়াতেই, তার পেছনে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি ফিটনেসের। তপু নিজেও বলেছেন শক্তিশালী পাকিস্তানিদের বিপক্ষেও ‘মাথা খাটিয়ে খেলেই’ তাঁরা সফল। ৯৫ মিনিট পর্যন্ত সেই মাথা খাটিয়ে পারফরম করে যেতে পেরেছেন যে তাঁরা, সেই জ্বালানি আবার জুগিয়েছে ফিটনেস। আজ নেপালের বিপক্ষে আরেকটি কঠিন পরীক্ষায় নামতে তাই ভীত নন তপু কিংবা বাংলাদেশ ডিফেন্সের কেউ। পাকিস্তানের বিপক্ষে যাঁরা বেঞ্চে ছিলেন এবং শেষ দিকে বদলি নেমেছিলেন যে তিনজন তাঁদের নিয়েই কাল বিকেলে ঘাম ঝরিয়েছেন জেমি ডে ও তাঁর সহকারীরা। তপুরা হোটেলেই ছিলেন বিশ্রামে। আজ আবার সজীব হয়ে মাঠে নামার কথা তাঁদের। দলের সিনিয়র স্টপার ব্যাক নাসিরউদ্দিন চৌধুরী এখনো মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন না তপু ও টুটুল হোসেন বাদশা সমান তালে পারফরম করছেন বলেই। জুনিয়র টুটুলকে গাইডও করছেন তপু, নিজে যেমন দারুণ ভক্তি করেন লেফট ব্যাক ওয়ালি ফয়সালকে। দুজনই নারায়ণগঞ্জের। মোনেম মুন্নার সাহচর্যও পেয়েছেন ওয়ালি। কিংব্যাকের সেই ধারাটাই যেন তাঁরা ধরে রেখেছেন জাতীয় দলে। গত মৌসুমে তপুর রেকর্ড পারিশ্রমিকই তো মুন্নাকে স্মরণ করিয়েছে। এখন পারফরম্যান্সেও সেই পথে হাঁটার দাবি। এই সাফ বড় উপলক্ষ হয়েই এসেছে তপুর জন্য, রক্ষণ সামলানোর মূল কাজটা করে দুই ম্যাচে দুই গোলও যে করে ফেলেছেন তিনি। আরেক বর্মন রজনী কান্তের হাত ধরে ২০০৩-এর সাফের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল বাংলাদেশ। তপু এত দূর এখনই ভাবতে চাইছেন না, ‘সেমিফাইনালে ওঠা নিয়েও এখনো অনেক সমীকরণ। অত দূর তাই আমরা ভাবতে চাই না। নেপালিদের হারানোই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। ওরাও দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। ডিফেন্সে আমাদের ছয়জনের তাই আরো একাত্ম হয়ে খেলতে হবে।’ হ্যাঁ, ডিফেন্সে ছয়জনের কথাই বলেছেন তপু। জেমি ডে’র একাদশে দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার যে থাকবেই। ডিফেন্ডিংয়ের সময় সেই দুজনকে নিয়েই বাংলাদেশের ছয়। এভাবেই এখনো পর্যন্ত কঠিন বাধাগুলো পেরিয়ে যাচ্ছে লাল-সবুজ। যেকোনো একজনের ভুলচুকেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে সব। তবে তা হচ্ছে না, বরং তপুর মতো একজনের পারফরম্যান্স গোটা দলকেই করছে উজ্জীবিত।