স্বাধীনতার পর দ্বিতীয়বারের মতো শূন্য ইসি

স্বাধীনতার পর দ্বিতীয়বারের মতো দেশের নির্বাচন কমিশন শূন্য। গত সোমবার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার থেকে ইসি নেই। নতুন ইসি গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি শূন্যই থাকবে। এর আগে ২০০৬ সালে বিচারপতি এম এ আজিজ কমিশন বিদায় নেওয়ার পর এমন শূন্যতা সৃষ্টি হয়।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল থেকে সদ্যোবিদায় নেওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) দপ্তরগুলো নতুন নির্বাচন কমিশনারদের জন্য প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়েছে। নামফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, গত দুই দিনে ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের ১৮ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ কর্মকর্তাকে নুরুল হুদা কমিশনের মেয়াদের শেষ দিন বদলি করা হয়। তাঁদের বিদায়ের পরদিন গতকাল ইসি সচিবালয়ের পাঁচ কর্মকর্তার দপ্তর বদল করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কর্মকর্তাদের রদবদলের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি সচিবালয়। এতে কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলির সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। গত সোমবার আদেশ জারি হয়। আর গতকাল ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) পর্যায়ের পাঁচজনকে বদলি করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও একজন কবিতা খানমের দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। সিইসি ও কয়েকজন নির্বাচন কমিশনারের একান্ত সচিব পদসহ আরো কিছু পদেও বদলির আলোচনা আছে।

ইসি সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে বরিশাল ও সিলেটের অতিরিক্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তা; যশোর ও কুষ্টিয়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা; নোয়াখালী, নরসিংদী, মাদারীপুর, ভোলা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নাটোরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, পটুয়াখালী ও দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

আগের শূন্যতা : ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়। তবে আগের ধারাবাহিকতায় দেরিতে নিয়োগ পাওয়ায় একজন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ওই দিনই কে এম নুরুল হুদার কমিশন দায়িত্ব নেয়। এতে ওই সময় শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি বলেই কমিশন সচিবালয়ের কর্তারা মনে করেন।

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বিচারপতি এম এ আজিজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ ছাড়েন ওই বছরের ২১ জানুয়ারি। অন্য পাঁচ কমিশনার মো. সাইফুল আলম, মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী, মাহমুদ হাসান মনসুর ও বিচারপতি মাহফুজুর রহমান পদত্যাগ করেন ৩১ জানুয়ারি। এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন নিয়োগ পায় ৫ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে ওই সময় পাঁচ দিন নির্বাচন কমিশন ছিল না। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবু হেনার পদ শূন্য হয় ২০০০ সালের ৮ মে। ওই বছরের ২৩ মে এম এ সাঈদ ওই পদে নিয়োগ পান। তবে সে সময় নির্বাচন কমিশনার এম এম মুন্সেফ আলী ও এ কে মোহাম্মদ আলী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

শূন্যতা সমস্যা নয় : গত রবিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সংবিধান বা আইনে (সিইসি ও অন্যান্য ইসি পদ) শূন্য থাকতে পারবে না—এ রকম কোনো কথা নেই। ’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক সম্প্রতি বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। সেখানে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শূন্য হওয়ার পর কিছুদিন নির্বাচন কমিশন না থাকাটা অস্বাভাবিক হবে। তবে শূন্য রাখা যাবে না—এ ধরনের কোনো কথা বলা নেই। অতীতেও কয়েকবার কিছু সময়ের জন্য দেশে ইসি ছিল না। এবারও যৌক্তিক কারণে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে দেরি হলে তেমন সমস্যা হবে না। তা ছাড়া এখন তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো নির্বাচনও নেই।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ