রাবি স্টেশনে জন্ম নেয়া শিশুটির নাম রাখা হলো ‘স্বপ্ন’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) স্টেশনের বিশ্রামাগারে পাশে জন্ম নেয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছে স্বপ্ন। তাকে স্বপ্ন ময় করে গড়ে তোলার জন্য এই নাম রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রাফিক।

 

তিনি সিল্কসিটি নিউজ বলেন, স্বপ্নকে লালনপালন করার জন্য ইতি মধ্যে রাজশাহীর এক ব্যক্তি ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তার অবস্থা বর্তমানে ভালো আছে। মা ও শিশু সুস্থ থাকায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মা-শিশুকে নিয়ে গিয়ে রাবি স্টেশনের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে রাখা হয়েছে। সেখানে রেখেই তাদের দেখ-ভালের দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি-এমনটিও নিশ্চিত করেছেন উদ্ধারকারী দলের অন্যতম সদস্য রফিকুল ইসলাম।

 

  • এদিকে জানা গেছে, সেই নারী মানসিক ভারসম্যহীন। তিনি কথা বলতে পরে না। তিনি স্টেশনের পাশে পাশে ঘোরাঘুরি করেন। তিনি রাবির শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা বা খাবার চেয়ে দিনাতিপাত করতেন। এরই মধ্যে মানসিক ভারসম্যহীন ওই নারীটি কোনো লম্পটের দ্বারা ধর্ষিত হয়েই গর্ভবতি হয়ে পড়েন বলেও ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

 

উদ্ধারকারী দলের আরেক সদস্য নাজমুস সাকিব সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘প্রতিটি শিশুর বেড়ে উঠার অধিকার রয়েছে। সে যেভাবেই জন্ম নিক না কেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে রাবি স্টেশনে জন্ম নেওয়া শিশুটির অধিকারগুলো নিশ্চিত করাই যেন এখন একটা বিশাল চ্যালেঞ্জের বিষয়। তাই তাকে স্বপ্নময় করে গড়ে তুলতে আমরা তার নাম রেখেছি ‘স্বপ্ন’।

 

এর আগে শুক্রবার স্টেশনের বিশ্রামাগারের পাশে জন্ম নেয়া একটি শিশু। পরে সেখানে তারা পরে থাকলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রামেকের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে। যন্ত্রণায় ছটপঠ করছে মা। আর কিছুক্ষণ আগেই জন্ম নেওয়া শিশুটি তখন ঠান্ডায় কাঁপছে থর থর। এই অবস্থায় অসহায় সেই মা টিকে সহায়তায় হাত বাড়িয়ে এগিয়ে যান রাবির কয়েকজন শিক্ষার্থী।

 

  • একজন বুদ্ধিহীন অসহায় মায়ের জন্য এমনভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে যারা এগিয়ে যান তাদের মধ্যে একজন হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক। তার ফেসবুকে পেজ থেকেই সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে এবং অসহায় ওই মা ও তার শিশুটিকে উদ্ধারের বর্ণনাটি হুবুহু সিল্কসিটি নিউজের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।

 

র‌ক্তে ভে‌সে গে‌ছে স্টেশ‌নের বদ্ধ রুমের মে‌ঝে। একটা ময়লা, ছেড়া বস্তার উপর শু‌য়ে অা‌ছে মা। পা‌শেই নোংরা একটা গে‌ঞ্জির ওপর হাত-পা নাড়‌ছে সদ্যজাত শিশু। হত‌বিহবল অামরা ক‌য়েকজন। এক নারী‌কে পাওয়া গেল। না‌ড়িটা কে‌টে দি‌লেন। কিভা‌বে কি করা যায় ? দিশা নেই। স্থানীয় কাউ‌কে পাওয়া যায়‌নি অাশ্রয় দেয়ার। মা‌য়ের প্রচন্ড ব্লি‌ডিং।

 

  • কাঁপ‌ছিল বাচ্চা। রেল স্টেশ‌নের অব্যবহৃত য‌াত্রী বিশ্রামাগার যেন মানবতার শবাগার। প‌রে দর‌দি ক‌য়েকজন এ‌গি‌য়ে অাস‌লেন। অব‌শে‌ষে অ্যাম্বু‌লেন্স ডে‌কে হাসপাতা‌লে নেয়ার সিদ্ধান্ত। বন্ধু নাজমুস সাকিব ক‌য়েকজন‌কে নি‌য়ে স্টেশন বাজা‌র থে‌কে এক হাজার টাকা ওঠা‌লো। হ‌লের এক ছোট ভাই‌য়ের গামছা দি‌য়ে মোড়া‌নো হ‌লো বাচ্চা‌কে।

 

রাজশাহী বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য় রেল স্টেশনের প্ল্যাটফরম থে‌কে বাচ্চা‌ অার মান‌সিক ভারসাম্যহীন ওই মা এখন রাজশাহী মে‌ডি‌কে‌লে। ২৩ নম্বর ওয়া‌র্ডে ভ‌র্তি করা হ‌য়ে‌ছে। রক্ত দেয়া হ‌য়ে‌ছে দুই ব্যাগ। চি‌কিৎসকরা ব‌লে‌ছেন মা‌কে বাচা‌তে দ্রুত একটা অপ‌া‌রেশন কর‌তে হ‌বে।

 

অাপাত ব্যবস্থা হ‌য়ে‌ছে। পরবর্তী হেল্প লাগ‌বে। যে কোনোভা‌বে ‌কেউ সাহায্য কর‌তে অাগ্রহী থাক‌লে প্লিজ প‌রি‌চিতরা ফো‌নে ও অন্যরা ইনব‌ক্সে সা‌কিব অথবা অামার সা‌থে যোগা‌যোগ কর‌তে পা‌রেন।

 

পরে শনিবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাতে প্রসবকৃত ছেলে শিশুটি এবং তার মাকে রামেক হাসপাতালের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তারা দুজনেই এখন অনেকটা ভালো আছে। তবে তখনো তাদের পাশে রাবির ওই শিক্ষার্থীরাই নানাভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছিল। এ যেন এক অন্যন্য মানবিকতা।

 

স/আ