সোনামসজিদ বন্দরে শুল্কমুক্ত দোকানে পন্য শুধুই সিগারেট

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে যাওয়া ও ভারত ফেরত যাত্রীদের কেনাকাটার সুবিধার জন্য সেখানে চালু হয়েছে একটি শুল্কমুক্ত দোকান (ডিউটি ফ্রি সপ)। তবে ওই দোকানে শুধু সিগারেটই বিক্রি করা হচ্ছে। আর কোনো পণ্য সেখানে নেই।

 
জানা যায়, সোনামসজিদ সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন অফিসের পাশেই চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান কেক কেটে এ শুল্কমুক্ত দোকানের উদ্বোধন করেন। তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখানে কয়েক ব্র্যান্ডের সিগারেট ছাড়া আর কিছুই বিক্রি হচ্ছে না। ফলে শুল্কমুক্ত দোকানটি তেমন কোনো কাজেই আসছে না।

 
সরেজমিনে শুল্কমুক্ত দোকানে গিয়ে প্রথমেই চোখে পড়ল একটি সাইন বোর্ডে যাতে লেখা আছে, ‘শুল্ক মুক্ত বিপনি’ সরকার অনুমোদিত পণ্য-সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান। সেখানে যে সমস্ত পণ্য বিক্রয়ের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো হলো- খাদ্য সামগ্রী, ইলকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য, জুয়েলারি সামগ্রী, তামাকজাত পণ্য, চামড়ার পণ্য, হ্যান্ডিক্র্যাফটস, খেলনা, উপহার এবং পাটের তৈরি জাতীয় পণ্য। প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে যেতেই দেখা গেল, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একে অন্যের সঙ্গে গল্প করছেন। ক্রেতাদের তেমন কোনো আনাগোনা নেই।

 
এখানে কী কী পণ্য ও সেবা পাবেন একজন আগ্রহী ক্রেতা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছে আমরা প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারি, সাধারণ মানুষের কাছে কোনো প্রোডাক্ট বিক্রি করা হয় না।’

 
কি কি পণ্য এখানে বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে ১০ প্রকারের সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।

 
সিগারেট ছাড়া অন্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করলেই দোকানটা ভরে দিতে পারি না। কাস্টমস যে দিন বলবে জুয়েলারি আইটেম নিয়ে আস, সেদিন নিয়ে আসব। এখন আমাদের শুধু সিগারেট বিক্রির অনুমতি আছে।’

 
গত তিন মাসে কত টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে সে বিষয়টি জানতে চাইলে ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম কাস্টমের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। ওই এলাকায় বেশ কয়েক ঘন্টা অবস্থানের পর দেখা যায় দু’জন যাত্রী ডিউটি ফ্রি সপে পণ্য কিনছেন। তাদেরই একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হুজরাপুরের বাসিন্দা আশরাফুল হক জানান, তিনি ভারতে যাচ্ছেন। ডিউটি ফ্রি সপে সিগারেট ছাড়া কিছুই বিক্রি হচ্ছে না। আরো কিছু পণ্য বিক্রি হলে যাত্রীদের সুবিধা হতো।

 
ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা আত্মীয়দের নিতে এসেছেন প্রসাদ ফনী নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। ইমিগ্রেশনের সামনে কথা হয় তার সাথে। ডিউটি ফ্রি সপ নিয়ে একরাশ বিরোক্তি প্রকাশ করলেন তিনি। তার ভাষ্য, এখানে শুকনো খাবার, অন্তত বিস্কুট বিক্রি করলেও ভালো মনে করতাম, কিন্তু শুল্কমুক্ত সিগারেট বিক্রি তো না বিষ বিক্রি করছে। এটার কোনো মানে হয়?

 
মুখলেসুর রহমান নামে ভারতগামী আরেক যাত্রী বলেন, ‘শুনেছি ওখানে এক প্যাকেট করে সিগারেট দেয়। আমি ধূমপান করি না ভাই, তাই ওখানে কোনো দিন যাওয়াও হয়নি।’

 
ডিউটি ফ্রি সপের দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মিন্টু রহমানের কাছে সিগারেট ছাড়া অন্য পণ্য বিক্রি না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন ‘আমি এখানে কয়েকদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়গুলো আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।’

 
এ বিষয়ে জানতে সোনামসজিদ স্থল ও শুল্ক বন্দরের সহকারী কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। এরপর সোনামসজিদ স্থল ও শুল্কবন্দরের সহকারী কমিশনার ইফতেখার জাহানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘শুল্কমুক্ত দোকানটিতে মিন্টু রহমান নামে রাজস্ব বোর্ডের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন তিনিই তো কথা বলবেন।’

 
তার পরামর্শ অনুযায়ী মোবাইলে শুল্কমুক্ত দোকানের দায়িত্বে থাকা মিন্টু রহমানের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার দায়িত্ব শুধু এখানে পাসপোর্টধারীর বাইরে কারো কাছে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না সেটা দেখা। কেন সিগারেটের বাইরে অন্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে না এটার বিষয়ে তার কিছুই বলার নেই।

 

 

প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা সাইন বোর্ডে উল্লেখিত পণ্যগুলো বিক্রির অনুমোদন আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘সেগুলোর অনুমোদন আছে। ডিউটি ফ্রি সপটি যারা লাইসেন্স নিয়ে চালাচ্ছে তারা যদি সেগুলো না বিক্রি করে তাহলে আমি কি করব। অন্য পণ্যগুলো বিক্রি শুরু করতে অনেক টাকাও বিনিয়োগ করতে হবে। শুনেছি তারা ঈদের পর অন্য পণ্য উঠাবেন।’

 
খাদ্যপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিতে কি সিগারেটের চেয়ে বেশি অর্থ প্রয়োজন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ সব যারা দোকান চালাচ্ছে তাদের বিষয়। আমি সেটা বলতে পারব না।’

স/শ