সেই নিপুণের পক্ষে বললেন ফারুকী

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আকস্মিক সিদ্ধান্তে ভর্তি হতে পারেননি নীলফামারীর এক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছেলে নিপুণ বিশ্বাস। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা হচ্ছিল, প্রতিবাদও জানাচ্ছিলেন কেউ কেউ। এবার তীব্রভাবে সমালোচনা করলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

নিজের ফেসবুকে ফারুকী লিখেছেন,‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও ভর্তি হতে পারছেন না নিপুণ বিশ্বাস।

নিপুণ দরিদ্র ঘরের সন্তান। তার বাবা নাপিতের কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালান। ফলে নিপুণের কোনো স্মার্ট ফোন নাই। স্মার্ট ফোন এবং নেট কানেকশন না থাকাতে তার পক্ষে বারবার ওয়েবসাইটে ঢুকে জানা সম্ভব হচ্ছিলো না সে টিকেছে নাকি টিকে নাই। নিয়ম ছিলো কর্তৃপক্ষ মেসেজ দিয়ে জানাবে। কিন্তু তার মোবাইলে মেসেজও আসে নাই। যে দিন ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ ছিলো তার আগের দিন সে কারো একজনের কাছে জানতে পারে সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তারপরই দ্রুত টাকা জোগাড় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হয় সে। যেহেতু ওটা ছিলো শেষ দিন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই মারফত ফোন করে ডিনকে জানায় যে সে পথে আছে। যাই হোক তার পৌঁছতে পৌঁছতে দেরী হয়ে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভর্তি করতে অপারগতা জানায়। ’

ফারুকী বলেন, ‘এই পর্যন্ত পড়ে আমি চোখ বন্ধ করে নিপুণকে দেখতে পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে জীর্ণ স্যান্ডেল পায়ে নিপুণ দাঁড়িয়ে। তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। তার গলা আটকে আটকে আসছে। সে বুঝতে পারছে না সে কাকে দোষ দিবে? তার মোবাইল না থাকাকে? মেসেজ না আসাকে? পথে দেরী হওয়াকে? নাকি তার দরিদ্র পিতাকে?’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে ফারুকীর মনে। লিখেছেন, ‘আচ্ছা কবে থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলা এতো নিষ্ঠুর হয়ে উঠলো? কবে থেকে শিক্ষকেরা হয়ে উঠলো এরকম বেরহম? আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি নাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকের নিবিড় সান্নিধ্য পেয়েছি। আমি তো দেখেছি তারা ছাত্রদের বিপদে আপদে কীভাবে পাশে দাঁড়ান। আইনকে ছাত্রের পথের কাঁটা না করে, আইনের হাত মচকে দিয়ে ছাত্রের জন্য রাস্তা বানান। সেই সব শিক্ষকদের দিন কি তবে শেষ? আমরা তবে কাদের শিক্ষক বানাচ্ছি? কী শিক্ষা দিবেন তারা আমাদের?’

kalerkantho

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই নির্মাতা। বললেন, ‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখনও সময় শেষ হয়ে যায় নাই প্রমাণ করার যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হৃদয়ও থাকা লাগে। ’

জানা যায়, রবিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে ২০২০-২১ সেশনে ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ। তবে, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে জানতে পারেন রোববার (৩০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায়।

ভর্তির জন্য বিবেচিত শিক্ষার্থীদের বলা হয়, সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি হতে হবে তাদের। কিন্তু কী করে সম্ভব তা? তার ভর্তি-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিপুণ তো তখন নীলফামারীর লক্ষ্মীচাপের নিজ বাড়িতে। তার পরেও রাতেই প্রতিবেশিদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করে নিয়ে নীলফামারী থেকে যশোর আসতে তার বেলা গড়িয়ে ১২টা পেরিয়ে যায়।

বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নিদিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় ভর্তি হতে পারেননি ওই শিক্ষার্থী। সময় এত কম ছিল যে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বিদায় নিতে হয়েছে তার। নিপুণ বিশ্বাসের বাড়ি নীলফামারীর সদর উপজেলা লক্ষ্মীচাপে। তার বাবা প্রেমানন্দ বিশ্বাস পেশায় একজন নাপিত। দুই ভাইয়ের মধ্যে মেধাবী নিপুণ ছোটবেলা থেকে আর্থিক অনটনের শত বাধা পেরিয়ে নীলফামারীর মশিয়ুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ