সুনাগরিক হওয়ার সংক্ষিপ্ত কোনো পথ নেই : শিক্ষামন্ত্রী

‘দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। তারা যেন দেশের সুনাগরিক হয়। এটির জন্য কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। আলোকিত, শিক্ষিত প্রজন্ম যখন আমরা গড়ে তুলতে পারব তখন তারা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে।

তাদের মধ্যে যখন জ্ঞানের প্রকৃত আলো দিতে পারব তখনই আগামী প্রজন্ম নিজেদের মধ্যে শক্তি খুঁজে পাবে’।

আজ রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বিষয়ভিক্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের ১৮ ও ১৯তম ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তারা এ কথা বলেন। অনলাইন প্লাটফর্ম জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (সিইডিপি) অধীন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

kalerkanthoশিক্ষক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘কলেজ শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা সত্যিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের জন্য আইসিটি দক্ষতা খুব বেশি জরুরি। সেটি এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো বিস্তৃত হবে।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল কাজ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের তৃষ্ণা জাগিয়ে তোলা। এটি খুব বেশি জরুরি। কারণ এখন আর জ্ঞানের উৎস কেবলই শিক্ষক নন। আরো অনেক উৎস আছে। একজন শিক্ষকের ভূমিকা এখন বেশি গাইড বা ফেসিলিটিটর হিসেবে। মানসিকতা পরিবর্তন নিয়ে আসা দরকার। এখন দ্রুত বিশ্ব পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে কমিউনিকেশনস স্কিলস, টিম বিল্ডিং, সফ্ট স্কিলস, ভ্যালুজ-এসব শেখাতে হবে। শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়ার চেয়ে বেশি দরকার তারা কর্মদক্ষতা নিয়ে বের হচ্ছে কিনা সেটি দেখা। তারা লেখা-পড়া শেষ করে আনন্দময় অভিজ্ঞতা নিয়ে বের হচ্ছে কিনা সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। ’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, আমরা একটা ভিশন নিয়ে কাজ করছি। আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চলছে। বাংলাদেশে যদি ১৫ আগস্ট না ঘটত, দেশ সামরিক শাসনের দিকে না যেত, তাহলে আজকে অর্থনৈতিক ও সামাজিত সূচকে আমরা কোথায় যাব- এসব নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন হতো না। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা, স্বপ্ন, পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়নে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যেসব সিদ্ধান্ত ছিল, সেইসব ধারাবাহিকতাগুলো অক্ষুণ্ণ রাখতে পারতাম তাহলে ২০২২ সালে এসে আমার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কোন দিকে যাচ্ছে সেটি আমাদের মুখ্য বিষয় থাকত না। আজকে আমরা উন্নত, মানবিক জায়গায় বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ, আদর্শনিষ্ঠ জাতিরাষ্ট্রে পরিণত হতাম।

নতুন প্রজন্মের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরির আহ্বান জানিয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘দেশে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। তারা যে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করছে, চর্চা করছে, সেটি তাদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। জ্ঞান আহরণের পদ্ধতিটি তাদের শেখাতে হবে। তারা যেন গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশের সুনাগরিক হয়। এটির জন্য কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই। আলোকিত, শিক্ষিত প্রজন্ম যখন আমরা গড়ে তুলতে পারব, তখন তারা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে। আমরা যখন তাদেরকে জ্ঞানের প্রকৃত আলো দিতে পারব, তখনই সে নিজের মধ্যে শক্তি খুঁজে পাবে। এই কাজটুকুন যদি শিক্ষকরা করতে পারেন, তাহলে আগামী প্রজন্মের প্রতিটি শিক্ষার্থী আলোকিত মানুষ হিসেবে তৈরি হবে। আর এটিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং পথ। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের উৎকর্ষতার মধ্যদিয়ে সেই চেতনা এবং জ্ঞানের আলো তাদের মধ্যে পৌঁছাবে। এটি করতে পারলেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কর্মপ্রচেষ্টা সেটি সফল হবে। ’

শিক্ষক প্রশিক্ষণ একসঙ্গে ২টি ব্যাচের ৮টি বিষয়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। এই প্রশিক্ষণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের মোট ৪৬২ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, সিইডিপির প্রকল্প পরিচালক ড. এ কে এম মুখলেছুর রহমান।

১৯তম ব্যাচের মার্কেটিংয়ের কোর্স উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. শারমিন মুসা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার, দর্শন বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান, ১৮তম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ইউজিসি অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম, ইতিহাস বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশা ইসলাম নাঈম, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিম ভুঁইয়া, মনোবিজ্ঞান বিভাগের কোর্স উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক প্রশিক্ষণ দপ্তরের পরিচালক মো. হাছানুর রহমান।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ