সুইডেনের বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবস পালন

১৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে সুইডেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস-২০২১ যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করে।

এ উপলক্ষে স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যবর্গের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, তাঁর জীবন, আদর্শ ও কর্মের ওপর আলোকপাত করে উন্মুক্ত আলোচনা সভা, প্রামাণ্য- ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় সরকারের আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং কমিউনিটি সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

দিনের শুরুতে দূতাবাস প্রাঙ্গণ এবং রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে দিবসটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ এবং সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রদূত মোঃ নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে উপস্থিত সুধীবৃন্দ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীসমূহ পাঠ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ। এরপর জাতির পিতার গৌরবোজ্জ্বল কর্মময় জীবনের উপর নির্মিত একটি বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ প্রদর্শিত হয়।

রাষ্ট্রদূত মোঃ নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং দূতাবাসের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান মোঃ মোরশেদুর রহমান তালুকদারের সঞ্চালনায় জাতির পিতার গৌরবোজ্জ্বল জীবন ও কর্মের উপর মুক্ত আলোচনা পর্বে উপস্থিত কমিউনিটি সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা তাঁদের আলোচনায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং অসামান্য আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতার রূপকার। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। সদ্যস্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে নিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই তাঁকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতির অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায় পচাত্তরের সেই ঘৃণিত অপশক্তি। ঘাতকরা ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে হত্যা করতে সমর্থ হয়নি, বলে উল্লেখ করেন বক্তাগণ। ১৫ই আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশের উন্নয়নে অধিকতর অবদান রাখার কথা বলেন তাঁরা।

রাষ্ট্রদূত মোঃ নাজমুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। তিনি রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মুজিববর্ষে জাতির পিতার আত্মত্যাগের মহিমা ও আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে দেশের উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি তিনি আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে দূতাবাসে প্রাঙ্গণে তাঁর জীবন ও কর্মের আলোকে ‘আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক দুই সপ্তাহ ব্যাপী চলমান আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ