সিদ্ধান্তহীনতায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে, যাত্রী সুবিধার জন্য এবার বনলতার কোচ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

একের পর এক সিদধান্তহীনতায় ভূগছে রেওয়ে। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে যেন জুজুবুড়ির ভর করেছে। কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হচ্ছে না দীর্ঘমেয়াদী। এ কারণে যেমন লোকসানের মুখে পড়ছে রেলওয়ে, তেমনি ভোগান্তি ও যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভও বাড়ছে দিনের পর দিন। গত কয়েক মাসে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। আবার কখনো কখনো সেই সিদ্ধান্ত রাতারাতি পরিবর্তনও হয়েছে জনরোষের ভয়ে। সর্বশেষ রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটের বনলতার কোচ পরিবর্তন নিয়ে পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত নিতেও দেখা গেছে রেলওয়েকে। তবে শেষ পর্যন্ত এই রুটের যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বনলতার কোচ পরিবর্তন করে পার্বতিপুরের ‘নীলসাগর’ কোচে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার বনলতার কোচগুলো ওই ট্রেনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর নীলসাগরের কোচ এসে যুক্ত হবে বনলতায়।

রেলওয়ে সূত্র মতে, শুধুমাত্র রাজশাহী-ঢাকা বিরতিহীন বনলতা ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছাড়ার সিদ্ধান্তেই প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার টাকা করে এই ট্রেনের পেছনে রেলওয়ের ক্ষতি হচ্ছে। সেই হিসেবে প্রতি মাসে সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। মাত্র ১০০ জন যাত্রীর জন্য গোটা একটি ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছাড়ার ফলে রাজশাহী থেকে যাতায়াত করতে এই টাকা লোকসান হচ্ছে।

আবার এই ট্রেনটির শুরতেই ১৫৫ টাকার নিম্নমাণের খাবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছিলো। এতে করে বনলতায় শোভন চেয়ারের অধিকাংশই যাত্রীশূন্য থাকত। এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশের পর সেই সিদ্ধান্ত কয়েকদিনের মাথায় বাতিল করতে বাধ্য হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বাধ্যতামূলক খাবারের দাম কেটে রাখার সিদ্ধান্তটিও ছিলো রেলওয়ের একটি অদূরদর্শী পরিকল্পনা। তবে খাবার টাকা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত বাতিলের কারণে এখন যাত্রী বেড়েছে শোভন চেয়ারে। তবে রাজশাহী থেকে হঠাৎ করে বনলতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছাড়ার ফলে আবারো লোকসানের মুখে পড়েছে এই ট্রেন।

এরই মধ্যে রাজশাহী-ঢাকা রুটে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়রোধে বনলতার কোচ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। সিল্কসিটি, ধূমকেতু, পদ্মা ও বনলতার সঙ্গে খাপখাওয়াতে একটি রেক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। এ ক্ষেত্রে বনলতার নতুন রেকটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যাতে করে প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে অপেক্ষামান বনলতা ট্রেনটির রেক দিয়ে সিল্কসিটি, ধূমকেতু বা পদ্মা হয়ে ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করতে পারে। নীলসাগরের এই রেকটিতে বনলতায় যুক্ত হলে ২০১টি আসনসংখ্যা সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি এই রুটে দুটি এসি কোচও যুক্ত হবে। ফলে রাজশাহী-ঢাকা রুটের যাত্রীসুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি আসনসংখ্যাও বাড়বে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৭, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বরের তিনদিনের অগ্রিম টিকিট বন্ধ করে দিয়ে নতুন ট্রেন অনুযায়ী টিকিট বিক্রি গত ২২ ডিসেম্বর থেকে চালু করে। কিন্তু বনলতার নতুন কোচ বদল হচ্ছে এমন সংবাদ ফেসুবকে ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে গত ২৩ ডিসেম্বর আগের সিদ্ধান্তে ফিরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েকে। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার বনলতার কোচ পরিবর্তন করে নীলসাগরে যুক্ত করা হয়।

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বনলতার যে রেক রয়েছে সেটি রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী অন্য তিনটি ট্রেনের সঙ্গে মেলে না। এ কারণে ওই রেকটি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ রাজশাহী-ঢাকা রুটের চারটি ট্রেনের মধ্যে অন্য তিনটি ট্রেনেই ব্যাপক সিডিউল বিপর্যয় থাকে। দুটি রেক দিয়ে অন্য তিনটি ট্রেন চালানো হত। এখন রেক পরিবর্তন করে বনলতায় যুক্ত হওয়ার ফলে সব ট্রেনেই এই কোচগুলো যুক্ত করে দেওয়া যাবে। এতে করে সিল্কসিটি, পদ্মা বা ধূমকেতু দেরি করলেও বনলতার রেক দিয়ে চালানো যাবে।

এদিকে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘রাজশাহী-ঢাকা রুটে সবচেয়ে জরুরী এখন ডাবল লাইন রেল চালু করা। এটি করা না হলে একটি লাইনে কখনো কখনো দুর্ঘটনা ঘটলেও উত্তরাঞ্চলজুড়ে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই উদ্যোগও হয়েতো জরুরী নেওয়া হবে।