রাজশাহীর বাজারে নকল কসমেটিক পণ্যের ছড়াছড়ি: ঝুঁকি পার্লারগুলোতে

নূপুর মাহমুদ:

রাজশাহীর অলিগলিতে গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন বিউটি পার্লার। সাথে খুচরা দোকান গুলোতে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন নামি দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী সামগ্রী। বর্তমান সময়ে আধুনিক তরুণীদের রূপ চর্চা করার বিশ^স্ততার জায়গা হলো বিউটি পার্লার। কিন্তু এই বিউটি পার্লারগুলোতেও এখন যেন ভরসা নেই। কসমেটিকের জগতটি যেন মেয়েদের জন্য এখন নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে না। কারণ নকল পণ্যে ছয়লাব হয়ে গেছে নগরীর বিভিন্ন বাজার ও প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তরুণীরা সাধারণত বিউটি পার্লারে লিপস্টিক, লিপ লাইনার, আইলাইনার, মার্সকারা, আইসেট, কাজল, ফাউন্ডিশন, শাইনিং মেকআপ, এবং ত্বকের ধরণ বুঝে বিভিন্ন ধরনের মেকআপ ইত্যাদি প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। তবে ফেসিয়ালের জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের ফেসিয়াল ক্রীম যেমন, নিম ফেসিয়াল,গোল্ডেন ফেসিয়াল। ফেসিয়াল ক্রীমগুলোর মধ্যে হলো, মার্সাস ক্রীম, এলোব্রেরা ক্রিম, নিম ক্রিম,ম্যাংগো ক্রিম, স্ক্যাব ক্রিম, ব্যানানা ক্রীম, রোজ ক্রীম ইত্যাদি। সাধারণত ক্রীমগুলো ২৫০ থেকে ১০০০ গ্রামের হয়ে থাকে। তবে মানুষের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণায় মেতে উঠেছে বিভিন্ন পার্লার। বাড়তি মুনাফার লোভে মানুষের ত্বক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করছে নগরীর বিভিন্ন পার্লার। যাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেই মেয়াদ। আবার সেগুলোর অনেকাংশেই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পার্লারগুলো রুপসজ্জায় যেসব প্রসাধনী ব্যবহার করছে তার বেশিরভাগই নকল। দেশের তৈরি এসব পণ্য বিদেশি বলে প্রতারণা করছে। তাদের ব্যবহার করা বেশির ভাগ পণ্য মেয়াদাত্তীর্ণ। অনেক পণ্যের গায়ে উৎপাদনের তারিখও নেই। তারা মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছে কিন্তু ভোক্তাদের যথাযথ সেবা দিচ্ছে না এমন অভিযোগ অনেক গ্রাহকের। পার্লার গুলোতে ক্রিমের কৌটা ব্যাতীত অন্য কৌটাতে রাখা হয় যাতে কোন উৎপাদনের তারিখ থাকেনা। সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। যা দেখে বোঝার উপায় নেই পণ্যটি আসল নাকি নকল ।

এদিকে নগরীর আরডিএ মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে নকল কসমেটিক পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে লেকমি ব্র্যান্ডের কাজল (লেকমি)। কিনতে গেলে বিক্রেতার ভাষ্য, পণ্যটি সরাসরি ভারত থেকে আমদানি করা। অথচ এর গায়ে দাম লেখা ১৮০ রুপি। প্রসাধন সামগ্রী বিক্রেতার সঙ্গে কুলিয়ে ওঠা যাবে না। হাতে গোনা যে কয়টি রাজশাহীর সাহেব বাজার দোকানে প্রকৃতই বিদেশি প্রসাধনী পাওয়া যায়, সেখানে এই রুপি-টাকার মূল্যমানের বিপদ। নকল পণ্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি দামে আসল পণ্য কেনার চেষ্টা করেন ক্রেতারা। সে ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি টাকা খরচ করতে হয়।

ক্রেতা ঈশিতা বলেন, ‘অধিকাংশ দোকানে ভুয়া জিনিস বিক্রি করে। এখন দ্বিগুন দাম দিয়ে হলেও ভালো জিনিসটি নেওয়ার চেষ্টা করি। বিভিন্ন সময় ফেসবুকে দেখি ভুয়া কসমেটিক্সে সব বাজে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই ভয়ে থাকি।

একই ব্র্যান্ডের দেশভেদে উৎপাদনের মূল্যের তারতম্য আছে। সেই সুযোগও নেয় বিক্রেতারা। কোথাও ভারতীয় পণ্যের কথা বলে ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একই রকম দেখতে ভুয়া পণ্য। নামি ব্র্যান্ডের মোড়ক হুবহু তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দামে। ।

সাধারণ ক্রেতাদের দাবি, কর্তৃপক্ষ উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই।সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহন করলে হয়তো নগরীর দোকানগুলোতে ও পার্লার গুলোতে এতো পরিমান নকল পণ্য সয়লাভ করতো না! সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।

রামেক চর্মরোগ বিভাগের চিকিৎসক আলফাজ হোসেন খান এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজার জুড়ে যেসব প্রসাধনীর প্রসার রয়েছে তার বেশির ভাগই ক্ষতিকারক। এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। আবার রুপ সচেতন নারীরা পার্লার গুলোতে গিয়ে নানা রকম ট্রিটমেন্ট নিচ্ছে তাতে করে ত্বকের নানা জটিল সমস্যা হচ্ছে। এমন কি ভয়াবহ কান্সার ও দেখা দিচ্ছে। গড়ে প্রতি দিন ১০/১৫ জন নারী ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আসেন। আমি পরামর্শ দিই এ সকল পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকার। সেই সাথে পার্লারের প্রসাধনী ব্যবহার থেকে দূরে থাকার।