নিজের বাড়িতে পুলিশ ক্যাম্প: বাগামারার এক ইউপি সদস্যের দাপটে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি সদস্য আবদুল মানিক প্রামাণিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকাবাসীকে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। নিজের বাড়িতে পুলিশ ক্যাম্পের সুবিধা নিয়ে গত দুই বছরে এই আওয়ামী লীগ নেতা অন্তত ১২টি মামলা দায়ের করিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। এছাড়াও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মানিক এলাকার একটি সরকারি পুকুরে জোর করে দখলে রেখেছেন। ওই পুকুরটি আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিলেও দখল করে মাছচাষ করছেন মানিক। মানিকের এসব অপকর্মে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ নিয়ে রাজশাহী পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মানিক প্রামাণিক ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এরপর নিজের বাড়িতে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সুবিধা নিয়ে তিনি যাচ্ছে-তাই করে যাচ্ছেন। নিষিদ্ধঘোষিত চরমপন্থী দলের সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার কারণে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছেন। চাঁদা দেওয়া না হলে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে থাকেন মাসিক। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাঁর কথায় উঠতে-বসতে হয় এলাকার সাধারণ মানুষকে।

ঝিকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক মকছেদ আলী অভিযোগ করেন, মানিক তাঁদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা চেয়ে না পেয়ে একটি নাশকতার মামলার আসামি করতে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। ওই মামলায় মানিক নিজেই সাক্ষী হয়েছেন।

ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইদুর রহমান ও আহম্মদ আলীও একই অভিযোগ করেছেন। তাঁদের দাবি, মানিকের দাপটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। তার কথার বাইরে গেলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়। তার বাড়িতে পুলিশ তদন্ত ক্যাম্প বসানো হয়েছে। পুলিশ ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে ক্যাম্প করলেও মানিকের কথায় উঠে-বসে পুলিশ। আর সেই সুযোগ নিয়ে মানিক সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে চাঁদার দাবিতে। এভাবে তিনি গত কয়েক বছরে অন্তত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ এই মানিক সর্বহারা দলের সদস্য। তাঁর এক ভাইও ছিলেন সর্বহারা দলের নেতা। তিনি ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। কিন্তু মানিক এখন লেবাস পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হয়েছে বড় নেতা।

ঝিকরার জোয়ানভাগপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, একটি ধর্ষণ মামলার আসামি করার ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছেন মানিক। ওই এলাকার বাসিন্দা মিঠুন আনোয়ার ও আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, মামলার ভয় দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে দুই দফায় ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এলাকার নীরিহ, বিত্তবান লোকজনদের টার্গেট করে তাঁদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকেন মানিক। পুলিশের সঙ্গে ভালো সর্ম্পক থাকায় এবং তাঁর বাড়িতে ঝিকড়া পুলিশ তন্দকেন্দ্র হওয়ার কারণে প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক চাঁদাবাজি করেন তিনি।

ঝিকরা বাজারের নাইটগার্ড শামসুল অভিযোগ করে বলেন, মনিক তার বকেয়া বেতনের ২০ হাজার টাকা আটকিয়ে রেখেছে। এই টাকা চাইতে গেলে তাকে মিথ্যা মামলার ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়।
জিয়ানন্দপাড়ার শামসুল হকের অভিযোগ, তাকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার নাম করে মানিক পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাকেই মামলার ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়।

ঝিকরা গ্রামের বাসিন্দা ভবানীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর একটি পুকুর দখল করে নিয়েছেন মানিক। জলাশয়টি উদ্ধারে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মানিক প্রামাণিক বলেন, ‘কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না চাঁদাবাজি করেছি। আমার বাড়িতে পুলিশ তদন্তকেন্দ্র আছে। কিন্তু আমি ভাড়া নেয় না। তবে পুলিশের কোনো সহযোগিতাও আমি নিই না। এসব মিথ্যা অভিযোগ। যারা অভিযোগ করেছেন, তারা বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধ করেছিলেন। এজন্য তাঁদের কাছ থেকে জরিমানা হিসাবে টাকা আদায় করা হয়েছে। কাউকে হুমকি বা ভয়ভীতি দেখানো বা পুলিশের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

জানতে চাইলে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ইউপি সদস্য আবদুল মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে । তিনি চরমপন্থী কিনা তা তালিকা না দেখলে বলা যাচ্ছে না। মানিকের বাড়িতে পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করা হলে সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

ওসি আরো বলেন, ‘পুুলিশ তদন্তকেন্দ্রটি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনে ছিলো। ওখানেই স্থানন্তর করা হবে। এর জন্য সংস্কারকাজ চলছে। দ্রুত সেখানে সরানো হবে।’