সিংড়ায় অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ: বেতন বন্ধের নির্দেশ

সিংড়া প্রতিনিধি:
নাটোরের সিংড়া উপজেলার চক কালিকাপুর টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’র অধ্যক্ষ আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন থেকে প্রতিষ্ঠানে না গিয়েই বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া অধ্যক্ষ আব্দুল বারী অত্র প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে একই পদে একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ভূক্তভোগী।

আর তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে প্রতারণার করার কারণে স্কুল ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্ববর্তী থানা গুরুদাসপুর বাসষ্ট্যান্ডে তার স্ত্রীর নামে রাজিয়া হেলথ টেকনোলজিতে অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া বিলদহর গ্রামের ভুক্তভোগী বকুল প্রামাণিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে অধ্যক্ষ আব্দুল বারীকে আটক করে সিংড়া থানা পুলিশ। পরে রাত ১১টায় ওই ভুক্তভোগীর ২লক্ষ ৮০ হাজার টাকা অল্প সময়ের মধ্যেই দেয়া অঙ্গীকার করিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয় স্থানীয় আ’লীগের নেতাকর্মীরা।

সিংড়া থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চক কালিকাপুর টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এ একই পদে একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করে এলাকার অনেককেই নিঃস্ব ও প্রতারিত করেছেন অধ্যক্ষ আব্দুল বারী।

প্রতারিত জেসমিন আক্তার, বকুল প্রমাণিক ও নাজমূল হোসাইন সহ অনেকেই জানান, অত্র প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নামের প্রায় ২০ জনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া টাকায় অধ্যক্ষ আব্দুল বারী পার্শ্ববর্তী থানা গুরুদাসপুর বাসষ্ট্যান্ডে তার স্ত্রীর নামে রাজিয়া হেলথ টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষ বারীর পিছনে ঘুরে ঘুরে পায়ের সেন্ডেল ক্ষয় করে এপর্যন্ত কোন টাকা ফেরত পাননি।

চক কালিকাপুর টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষ আব্দুল বারী ওই প্রতিষ্ঠানে আসেন না। শিক্ষক হাজিরা খাতায় মাসে ১দিনে স্বাক্ষর করে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু প্রতিমাসেই সরকারি বেতন ভাতা ঠিকই উত্তোলন করেন তিনি।

এদিকে অত্র প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী (পিয়ন) মনিরুল ইসলাম ও নাইটগার্ড দেদার হোসেন (০১৭৩৩১৩৬৭৪৭) নম্বর মুঠোফেনে এই প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে বলেন, সিংড়ায় গিয়ে তোর সাংবাদিকতার খবর করে দিবো। তোকে সাইজ করে দিবো। তোর ক্ষমতা দেখবো।

অত্র প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক মইনুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ আব্দুল বারী প্রতিষ্ঠানে আসেন না এটা সত্য। তবে গতকালের বিষয়ে থানায় মিমাংসা হয়েছে। এসব ব্যাপারে আব্দুল বারীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সিংড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) শাহেদ আলী বলেন, বকুল নামের এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ আব্দুল বারীকে গুরুদাসপুর থেকে আনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় মিমাংসার কথা রয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুর রহমান বলেন, তিনি মঙ্গলবারে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গত ২৭ মার্চ থেকে অধ্যক্ষ আব্দুল বারীর হাজিরা অনুপস্থিত পেয়েছেন। তিনি সভাপতি বরাবর এবিষয়ে রিপোর্ট করেছেন।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অত্র প্রতিষ্ঠানে সভাপতি সন্দ্বীপ কুমার সরকার বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের তথ্যের ভিত্তিতে ওই অধ্যক্ষর বেতন-বিল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। আর তিনি শুনেছেন বকুল নামের একজন ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ আব্দুল বারীর কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পাবেন।

উল্লেখ্য ২০১৪ সালে অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে দশ বছর ধরে অবৈধভাবে ‘কর্ম অক্ষম’ চিকিৎসা ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে অধ্যক্ষ আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে। পরে প্রশাসনের নির্দেশে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে বাধ্য হন অধ্যক্ষ আব্দুল বারীর।

স/অ