সারা দেশে বুথ স্থাপনে ব্র্যাকের ধীরগতি, রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ছে

করোনা চিকিৎসার নামে বিদেশি অনুদান নিয়েও ধীরে চলছে ব্র্যাক। নমুনা সংগ্রহের জন্য সারা দেশে ১০০টি বুথ স্থাপনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়েছে মাত্র ৪টি। উপরন্তু তাদের কোনো দক্ষ টেকনোলজিস্ট নেই। আছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি। এ বিষয়ে কোনো সমঝোতা স্মারক চুক্তি না হলেও ব্র্যাক এসব সহযোগিতা পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের দিকে চেয়ে আছে। এই যখন অবস্থা তখন সংশ্লিষ্ট অনেকেই অনুদানের টাকা খরচ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে ১০০টি বুথ স্থাপন করার কথা ব্র্যাকের। কিন্তু এ পর্যন্ত রাজধানীতে মাত্র ৯টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪টি বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাকিগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাছাড়া এসব বুথে নমুনা সংগ্রহের জন্য কমপক্ষে দু’জন করে টেকনোলজিস্ট থাকা দরকার। কিন্তু সেটিও নিশ্চিত করেনি ব্র্যাক। এখনও ঠিক হয়নি এসব বুথে নমুনা সংগ্রহ করে কোথায় কোন ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। এখানে কারা নমুনা সংগ্রহ করবে, দিনে কতজনের নমুনা নেয়া হবে। এ বিষয়গুলো এখনও স্পষ্ট নয়। বুথের জন্য নেই নমুনা সংগ্রহের সরঞ্জাম। নেই সংরক্ষণের ব্যবস্থাও। এমনকি প্রয়োজনীয় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। তাই ব্র্যাকের এসব বুথ চালু করতে গেলে এখন সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জ্যেষ্ঠ পরিচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্র্যাক দাতা সংস্থা ডিএফআইডি’তে প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়ে যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, সেখানে নমুনা সংগ্রহের সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্র্যাকের হাতে কোনো টেকনোলজিস্ট নেই। এমনকি কোনো কারিগরি সরঞ্জামও নেই। তারা যে টেকনোলজিস্টের হিসাব দেখিয়েছে সেই কর্মীরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাইক্রোবিয়াল ডিজিস কন্ট্রোল প্রোগ্রামে কর্মরত। অর্থাৎ কোনো প্রশিক্ষিত জনবল ও উপকরণ ছাড়া ব্র্যাকের পক্ষে এ ধরনের টেকনিক্যাল কাজ করা অসম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হল, ব্র্যাক আগাম অর্থ না পেয়ে কোনো কাজ শুরু করে না। ফলে তারা কোন কোন দাতা সংস্থা থেকে কী পরিমাণ অর্থ কী উদ্দেশ্যে এনেছে সেটি পরিষ্কার হওয়া দরকার।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মোরশেদা চৌধুরী রোববার টেলিফোনে বলেন, ‘বুথে নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওপর নির্ভর করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’ বুথ স্থাপন করতে কতদিন সময় লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৬৫টি বুথ তৈরি আছে। যার মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে ২৬টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। ১০টি চালু হয়েছে। এছাড়া এসব বুথে নমুনা সংগ্রহে কাজ করতে ইতোমধ্যে ৪৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তবে আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম অধিদফতরকেই দিতে হবে।’ ডিএফআইডি থেকে প্রাপ্ত অনুদান কিভাবে ব্যয় করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহের জন্য এখনও কোনো অর্থ পাইনি। তবে একটি প্রপোজাল দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে আমরা যে ১ মিলিয়ন ২৮ হাজার ৪৯১ ইউরো পেয়েছি তা দিয়ে কোভিড মোকাবেলায় গ্রামীণ জনসাধারণকে সচেতন করার কাজে ব্যয় করা হয়েছে।’

এদিকে করোনার পরীক্ষা করা নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষকে চরমভাবে নাজেহাল হতে হচ্ছে। হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে এবং দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে পরীক্ষা করাতে পারছেন না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইনে ফোন দিয়েও দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। এমনকি যারা হাসপাতালে ভর্তির পর সুস্থ হয়েও অনেকে পরবর্তী পরীক্ষা করাতে পারছেন না। ফলে তারা কোভিডমুক্ত কিনা সেটি নিশ্চিত হতে না পেরে হাসপাতালের বেডে কঠিন সময় পার করছেন। এছাড়া শুরু থেকেই প্রায় সব রোগীরা একটি অভিযোগ করে আসছেন যে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তারা ডাক্তার-নার্সদের সেভাবে দেখা পাচ্ছেন না। এসব কারণেও অনেক রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সামগ্রিক সংকট নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহে বুথ স্থাপন এবং প্রতিদিন ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এখন একেবারে অসুস্থ বা বৃদ্ধ ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে না। ঢাকাসহ সারা দেশে বুথ বসানোর কাজ চলছে। সেখানে লোকজনকে এসে নমুনা দিতে হবে। সূত্র: যুগান্তর

আরও পড়ুন:

বিনা মূল্যে ২০০ রোগীর করোনা টেস্ট করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র