সাবধান! চিংড়িতে সিলিকা জেল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বগুড়া শহরের ফতেহ আলী মাছের বাজারে গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালত ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়িতে ইনজেকশন দিয়ে সিলিকা জেল ঢোকানোর দায়ে মাছ ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেন।

ওজন বাড়াতে চিংড়িতে ইনকেজশন দিয়ে সিলিকা জেল ঢোকানো হচ্ছে। চিংড়ির গায়ের রঙের এসব জেল সহজে বোঝা না যাওয়ায় ঠকছেন ক্রেতারা। ক্ষতিকর এই জেল অস্ত্রোপচারের পর রোগীর ক্ষত ঢাকতে ব্যবহার করা হয়। যা কোনোভাবে মানবদেহে ঢুকলে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বগুড়ার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (সদর) মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন আড়তে এসব জেলমিশ্রিত চিংড়ি অনেক দিন ধরে বিক্রি হচ্ছে। আড়ত থেকে এসব মাছ খুচরা বাজারে এবং সেখান থেকে ভোক্তাপর্যায়ে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ না বুঝে এই বিষাক্ত চিংড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, খুলনা থেকে আসা এসব চিংড়িতে জেল পুশ করা হচ্ছে ওই স্থানেই। এই জেল যে শুধু চিংড়ির ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে তা-ই নয়, এটি চিংড়ির আকারকে বড় করছে এবং পচন রোধ করছে। তবে তা কোনোভাবেই মানুষের শরীরের জন্য উপযোগী নয়। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ার চাষি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। সেখানে ব্যবসায়ী আব্দুল খালেকের ৫০ কেজি, হাবিবুর রহমান, হাবিল ও আব্দুল বারীর ১০ কেজি জেলমিশ্রিত বিষাক্ত চিংড়ি জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যদের নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলী এই অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে বিষাক্ত চিংড়ি বিক্রির অপরাধে চার ব্যবসায়ীর ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (সদর) মিজানুর রহমান ও পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) শাহ আলী খান উপস্থিত ছিলেন।

বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, মূলত একটু বড় আকারের চিংড়িতে সিরিঞ্জ ভরিয়ে এই জেল ব্যবহার করা হয়। এতে করে মাছের আকার আরো বড় হয়ে যান। দেখতে মোটা লাগে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, চিংড়ি ব্যবহূত এই জেলটি সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগীর ক্ষত ঢাকতে ব্যবহার করা হয়। যা সিলিকন জেল নামে পরিচিত। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যে কেউ এগুলো কিনতে পারে। ইদানীং মাছের বাজারে গলদা চিংড়ির বেশ আমদানি। অনেকটা কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে মোটাতাজা চিংড়ি। কম দামে বিক্রির কারণ ওজনের ফাঁকি।

বগুড়া ফতেহ আলী বাজারে একজন ক্রেতা অভিযোগ করেন, ‘চিংড়ি মাছে জেল ইনজেক্ট করার পর তা আকারে বড় হয়ে যায়। ওজনও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পরে রান্নার আগে ধুলে ফেনা আকারে জেলগুলো বের হয়। মাছটিও আগের ছোট আকার ধারণ করে। আমি বেশ কয়েকবার প্রতারিত হয়েছি এসব চিংড়ি কিনে। ব্যবসায়ীরা অল্প কিছু টাকা বেশি পাওয়ার জন্য এসব করেছেন।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চিংড়িতে ব্যবহূত এসব জেল জীবননাশী। এগুলো মানুষের চোখ, কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। ধীরে ধীরে মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকে এতে। এটা তো খাদ্য উপাদান নয়। পেটে গেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও হতে পারে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘আমরা এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। এরা নিজেরা জেল না মেশালেও জেল মিশ্রণের তথ্য জানার পরও সেটি বাজারে বিক্রি করছে। এটিই তাদের অপরাধ। আগামীতেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সূত্র:কালের কণ্ঠ