সাত মাস আটকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ ও নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে সাত মাস আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার একমাত্র আসামি মো. বাদল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে বলে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদুল আলম নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরে বিকেলে নারী ও শিশু আদালতের হাকিম রুপম কান্তি দাস কিশোরীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

রবিবার বিকেলে শিশুরা পরিত্যক্ত এক বাড়িতে খেলতে গিয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে মেয়েটিকে দেখতে পায়। শিশুরা মেয়েটির পরিবারকে জানালে লোকজন নিয়ে সন্ধ্যায় ওই ঘরের তালা ভেঙে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এত দিন ঠিকমতো খাবারও খেতে দেয়নি ধর্ষক বাদল। উদ্ধারের সময় মেয়েটির অবস্থা ছিল শুকিয়ে কাঠ হওয়ার মতো। নিজে চলতেও পারছিল না।

উদ্ধার করার পর তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর এ ঘটনায় সোমবার বাদলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন মেয়েটির ভাই।

পুলিশ ও নির্যাতিত ছাত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সখীপুর উপজেলার রতনপুর কাশেমবাজার গ্রামের দরবেশ আলীর ছেলে দুই সন্তানের জনক বাদল মিয়া। ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে বাদল মিয়ার সখ্য ছিল। একপর্যায়ে এক যুবকের প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে সে তাদের বিয়ে দেওয়ার কথা বলে গত ১১ জানুয়ারি ভোরে গোপনে মেয়েটিকে তার (বাদল) পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে প্রায় সাত মাস ধরে ধর্ষণ করছিল বাদল। এর মধ্যে চার মাস মেয়েটির বাড়িতেই ছিল ধর্ষক বাদল। ওই সময় মেয়েটির পরিবারকে নানাভাবে ভুল বুঝিয়েছে সে। চার মাস পর সে একদিন মেয়েটির বাড়ি থেকে চলে যায়।

ওই ছাত্রীর প্রেমিকের মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়েটি তাঁর ফেসবুক বন্ধু ছিল। তাকে ফেসবুকে না পাওয়ায় বছরখানেক ধরে যোগাযোগ নেই।

মেয়েটি জানায়, সখীপুর মহিলা কলেজের ছাত্রী সে। গত বছর আগস্টের দিকে ফেসবুকের মাধ্যমে টাঙ্গাইল শহরের এক কলেজছাত্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসময় সে (মেয়েটি) তার প্রেমিককে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি সে পরিবারের কাউকে বলতে সাহস পায়নি। গত বছরের ডিসেম্বরের দিকে সে বাদল মিয়াকে তার ইচ্ছার কথা জানায়। ঘটনা শুনে বাদল বিয়ের ব্যবস্থা করে দেবে বলে তাকে আশ্বস্ত করে। কয়েক দিন পরে বাদল তাকে বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় করতে বলে। নিজের জমানো কিছু টাকা তুলে দেয় বাদলের হাতে। আরো টাকার কথা বলায় একদিন সে তার মামার বাড়ি গিয়ে মামার ব্যবসার জন্য জমানো এক লাখ ৩০ হাজার টাকা চুরি করে বাদলের হাতে তুলে দেয়।

মেয়েটি জানায়, বাদলের কথামতো গত ১০ জানুয়ারি সে ব্যাগে তার জামাকাপড় ও গয়না ভরে রাখে। ১১ জানুয়ারি ভোর ৫টার দিকে সে ব্যাগ নিয়ে চলে যায় বাদলের ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে। সেখানে আগেই উপস্থিত ছিল বাদল। ঘরে নিয়ে বাদল তাকে বলে, ‘বিয়ের সব ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। তুই কোনোভাবে সাড়া-শব্দ করিস না। কেউ বুঝতে পারলে বিয়ে আর হবে না। এমনকি ওর (প্রেমিক) সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করিস না। তাহলে বিপদ হতে পারে। ’ এই কথা বলে সে বের হয়ে যায়।

মেয়েটি জানায়, সন্ধ্যার দিকে বাদল ফিরে আসে হোটেলের খাবার নিয়ে। জানায়, বিয়ের কাজ কিছু এগিয়েছে, পরের দিন বাকি কাজ হবে। এভাবে একের পর এক নানা কথা বলে দিন পার করতে থাকে। আর খাবারের সঙ্গে কী যেন মিশিয়ে দেয়। খাবার খাওয়ার পর তার ঝিমুনি আসে। এর মধ্যে সে তার মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। দিন বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। একদিন নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে বাদল মিয়া তাকে ধর্ষণ করে। এর পর থেকে মাঝেমধ্যে সে এভাবে তাকে নির্যাতন করত। আস্তে আস্তে সে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। মে মাসের দিকে বাদল দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেওয়া শুরু করে। সপ্তাহে একবার সন্ধ্যার দিকে খাবার দিত। ভাত দেওয়া হতো না ঠিকমতো। পাউরুটি দেওয়া হতো। পানি থাকত না। কোমল পানীয় দেওয়া হতো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকত।

উদ্ধার হওয়ার আগেকার অবস্থা সম্পর্কে মেয়েটি বলে, ‘আগের দিন একটি জানালা খুলে দেখি শিশুরা খেলা করছে। তাদের ডাক দিতে গিয়েও গলা দিয়ে কোনো কথা বের হয় না। তারা আমার চুল দেখতে পায়। ওরা চলে যায়। পরের দিন আবার চেষ্টা করি। সেদিনও কোনো কথা বলতে পারিনি। হাত বের করে ইশারা করি। সেদিন ওরা আমাকে দেখতে পায়। ’ এ কথাগুলো বলার সময় তার কথা যেন জড়িয়ে যাচ্ছিল।