সরকারি বরাদ্দ বৈষম্যে রাসিক: ৬ কোটির স্থলে মিলেছে মাত্র এক লাখ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দেশের ১১ সিটি করপোরেশনের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন (ওয়াশ) খাতে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ খাতে ১১ সিটি করপোরেশনের মধ্যে ছয়টিতে গত অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়লেও রয়েছে অস্বাভাবিকতা। চলতি বাজেটে ওয়াশ খাতে চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ অস্বাভাবিক হারে কমেছে। এ ছাড়া খাতটিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ বাড়ার হারও অস্বাভাবিক। এ রকম অধারাবাহিক বরাদ্দের ফলে সিটি করপোরেশনের ওয়াশ খাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রতিনিধিরা। কারো কারো ধারণা, রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ কমবেশি করা হয়েছে।

বাজেট বিশ্লেষণে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ কমেছে। অন্যদিকে গাজীপুর, কুমিল্লা, রংপুর, বরিশাল, খুলনা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ বেড়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৬১ কোটি ১২ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেটে পানি সরবরাহ, পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং হাইজিন খাতে সংস্থাটিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে গত অর্থবছরের ওয়াশ খাতে এক হাজার ৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বিপরীতে এবার দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সিলেট সিটি করপোরেশনে গত বছর ৮৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল ওয়াশ খাতে। কিন্তু এ বছর দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ওয়াশ খাতে গত বছর বরাদ্দ ছিল ১৪০ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা। আর রাজশাহী সিটি করপোরেশনে গত বছরের ছয় কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে এ বছর দেওয়া হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা!

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ওয়াশ খাতে গত বছর বরাদ্দ ছিল ৬৭৫ কোটি টাকা। এ বছর কমিয়ে ৪৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গত বছর ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩৪০ কোটি টাকা। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে গত বছরের ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে এবার ওয়াশ খাতে দেওয়া হয়েছে ৬৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। রংপুর সিটি করপোরেশনে গত বছরের ২০ কোটি টাকার বিপরীতে এ বছর দেওয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। একইভাবে বরিশাল সিটি করপোরেশনে ২৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার বিপরীতে চলতি অর্থবছরে ওয়াশ খাতে দেওয়া হয়েছে ৪২ কোটি সাত লাখ টাকা। খুলনা সিটি করপোরেশনে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে ওয়াশ খাতে সংস্থাটির বরাদ্দ ছিল ২৫ কোটি টাকা।

জনপ্রতিনিধিরা জানান, ওয়াশ খাতের বরাদ্দ থেকে নিরাপদ পানি, নর্দমা পরিষ্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন, জনস্বাস্থ্য এবং নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ হয়। বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ধারাবাহিকতা না থাকলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ব্যাহত হতে পারে। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় আন্তর্জাতিক সূচকেও পিছিয়ে পড়তে হয়। নগরবাসীর অসন্তুষ্টির কবলেও পড়েন জনপ্রতিনিধিরা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পর্যটক, জনসংখ্যা বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশনের পরই সিলেটের অবস্থান। কিন্তু সিলেটে ওয়াশ বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা সত্যি হতাশাজনক। এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এ খাতে বরাদ্দ কমানোর ফলে স্বাভাবিক কাজের গতি মন্থর হবে। সরকারের উচিত ওয়াশ বাজেট পুনর্বিবেচনা করা।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সিটি করপোরেশনের জন্য ওয়াশ খাতে বাজেট বরাদ্দে ধারাবাহিকতার অভাবে চলমান প্রকল্পগুলোতে প্রভাব পড়বে। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই সিটি করপোরেশনভেদে বরাদ্দ কমবেশি করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র সরকারদলীয় না হওয়ায় হঠাৎ করে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করে অনেকে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপির হওয়ার কারণে তখন বরাদ্দ কম ছিল। বর্তমান মেয়র সরকারদলীয় হওয়ার কারণে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে দূরত্ব থাকায় নগরীটির বরাদ্দ কমানো হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘জনসংখ্যা, পরিসর ও প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়াশ খাতে বরাদ্দ হওয়া উচিত। ওয়াশ খাতে অধারাবাহিক বরাদ্দের ফলে স্যানিটেশন ও জনস্বাস্থ্য খাতে প্রভাব পড়ে। অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে রাখা উচিত। কারণ এর প্রভাব জনপ্রতিনিধির চেয়ে সরকারের ওপর বর্তায় বেশি।’

তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দিষ্ট খাতে চলামান প্রকল্পের ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলমান প্রকল্প থাকা সিটি করপোরেশনগুলোতে বরাদ্দ বেশি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প যেগুলোতে নেই, সেসব সিটি করপোরেশনে কম দেওয়া হয়েছে।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ