রবিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সমবায় মার্কেটে ফাটল, ধামাচাপা দিতে তৎপর উভয় পক্ষ

Paris
ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২০ ২:৫৬ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সোনাদিঘির পূর্বে মালোপাড়া এলাকায় অবস্থিত সমবায় সুপার মার্কেটের ভবনটির একাধিক কলামসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিষয়টা ধামাচাপা দিতে তৎপর। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষ মার্কেটটির উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে রয়েছে মার্কেটে থাকা ব্যবসায়ী-ক্রেতাসহ আশপাশের ভবনগুলো।

এদিকে সমবায় মার্কেট কর্তৃপক্ষের দাবি, নিজ নামে দোকান ভাড়া নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা একাধিক দোকান অন্যদের ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নামে মাত্র ভাড়া (দোকান ভেদে ১৫০ থেকে ১২০০ টাকা) প্রদান করে এই চক্র অপর পক্ষকে ভাড়া দেয়া দোকানগুলো থেকে প্রতিমাসে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একতরফা মুনাফামুখি মনোভাবের কারণে ও অসহযোগীতার কারণে চাইলেও মার্কেটটি সংস্কার করতে পারা যাচ্ছে না। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ভাড়া বৃদ্ধি করতে চাইলেও তাতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে।

মালোপাড়ায় প্রায় ১৬ কাঠা বাণিজ্যিক জায়গার ওপর অবস্থিত সমবায় মার্কেট ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ চারতলা ভবনের মার্কেটটির গুরুত্বপূর্ণ কলামের কয়েকটিতে চিড় ধরেছে। সেই চিড় দিয়ে কলামের ভেতরের রড দেখা যাচ্ছে। ছাদের বিমের ঢালাই খসে পড়েছে। নিচ তলার দোকানগুলোর ছাদের ঢালাইসহ প্লাস্টার খসে পড়েছে। ঢালাই খসে ছাদের রড বেরিয়ে গেছে। মার্কেটের জীর্ণ দশা ঢাকতে অনেক ব্যবসায়ী নামকাওয়াস্তে নিজ দোকানে প্লাস্টার ও রং করে রেখেছে। একই চিত্র নিচতলা থেকে শুরু করে চারতরায় অবস্থিত মার্কেটটির কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সমবায় ব্যাংকের কার্যালয়ের।

প্রথমদিকে মার্কেটটি এক তলা দিয়ে শুরু করা হলেও পরবর্তিতে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা কমিটির তত্বাবধানে এখন তা চার তলায় রূপ নিয়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াত আমলে সমবায় ব্যাংকটির তৎকালীন পরিষদের দুর্নীতি ও স্বজনপৃতীর কারণে শহরের বুকে এত বিশাল ও মূল্যবান সম্পদ থাকা সত্বেও লাভের মুখ দেখছে না সমবায় মার্কেট কর্তৃপক্ষ। বিষয়টির সত্যতা মেলে কর্তৃপক্ষের দেয়া আয়ের হিসেবে। মার্কেটের আয় দিয়ে ব্যাংকটিতে কর্মরত ৪জনের বেতনও ঠিকমতো দিতে পারা যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সমবায় সদস্যরা। মার্কেট কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, বিভিন্ন আয়তনের ৬২টি দোকানের প্রতিটি থেকে সমবায় মার্কেট কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাবদ আদায় করে মাত্র ১৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। এই যতসামান্য ভাড়াও অনাদায় পড়ে আছে অনেকের কাছে। ঠিক মতো পরিশোধ হলে মাস শেষে যার পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এই অর্থ দিয়ে ব্যাংকটির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন ঠিক মতো পরিশোধ করা যেমন সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি এই আয়ে মার্কেটটি সংস্কারও সম্ভব নয়। খরচের খাতায় এর সাথে রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স, আয়কর, বিদ্যুৎ বিল। সব মিলিয়ে মার্কেটটি পরিচালনায় বাৎসরিক খরচ দাড়ায় প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা।

মার্কেটে থাকা একাধিক দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা একটি পক্ষের কাছ থেকে দোকানগুলো ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন। ভাড়া বাবদ তাদেরকে দিতে হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এর বাইরে সালামি দিয়েছেন ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। মার্কেট কর্তৃপক্ষের দাবি এভাবে এক জনের নামে দোকান বরাদ্দ নিয়ে অন্য জনকে দোকান ভাড়া দেয়া ও ভাড়া আদায় করা চুক্তি বহির্ভুত অনিয়ম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সমবায় সমিতির সমন্বয়ে ১৯১৭ সালে গঠিত হয় ‘রাজশাহী কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক’। স্বাধিনতা পরবর্তি সময়ে ব্যাংকটির নাম দেয়া হয় রাজশাহী সমবার ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির সদস্য সংখ্যা রাজশাহী জেলার ৮৩টি সমবায় সমিতি। এদের প্রত্যেকেই সমবায় অধিদপ্তরের রেজিস্টার্ড মৎসজীবি, কৃষি ও যুব উন্নয়নসহ প্রাস্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন সমবার সমিতি। আর ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে এই সমিতিগুলো থেকে নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি দ্বারা।

১৯৮২ সালের দিকে মালোপাড়া এলকায় প্রায় ১৬ কাঠা জায়গার ওপর সমবায় সুপার মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে মার্কেটরটির এক ও দুইতলা মিলিয়ে ৬২টি দোকান রয়েছে। এর ওপরের জায়গা বরাদ্দ নিয়ে আবাসিক হোটেল পরিচালনা করা হচ্ছে। কথা ছিলো এই মার্কেট থেকে উপার্জিত আয়ের একটি অংশ ব্যায় করা হবে সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিত ও তাদের সদসদ্যসের উন্নয়নে। একই সাথে মার্কেটটি প্রয়োজন মতো মেরামত করা হবে। ব্যাংকটিতে হবে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান। তবে পূর্বে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বররা নিজেদের বন্ধু নয়তো আত্ময়দের নামে সুকৌশলে দোকানগুলো বরাদ্দ দিয়েছেন। এমনকি তারা মার্কেটের সামনের সিঁড়ি ঘর দোকান হিসেবে বরাদ্দ দিয়েরেছেন।

জানতে চাইলে সমবার সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, আমরা টাকা দিয়ে দোকানের পজিশন নিয়েছি। এখন মার্কেট কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে মার্কেটটি বাঙার পায়তারা করছে। আসলে বহুতল ভবন করতে তারা ডেভলপারকে এই মার্কেট দিয়ে দিতে চাইছে। মার্কেটে কোন ফাটল ধরেনি। মার্কেট চালুর পর থেকে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধি করলেও এতোদিন ধরে মার্কেটের কোন সংস্কার করেনি। এই মার্কেট বন্ধ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাবে। ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হবে।

এদিকে সমবায় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান, মার্কেটে কোন দোকানের পজিশন কোন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়নি। ব্যবসায়ীদেরকাছ থেকে জামানতের অর্থ নিয়ে মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মার্কেট সংস্কারের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই জায়গার উপর বহুতল ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হলে মার্কেট পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ করা সহজ হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। একই সাথে ব্যবসার পরিধি বাড়বে। এ কারণে মার্কেটের বর্তমান ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষ এখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।

স/স্ব

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর