সব ব্যাংকের জন্য ৯ আগস্ট থেকে বাধ্যতামূলক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আগামী ৯ আগস্ট থেকে সব ব্যাংককে আমানত ও ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে হবে। যারা এরই মধ্যে কার্যকর করেছে তারাসহ সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের জন্য এই নির্দেশনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশে এবং আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। সেই অনুযায়ী বেশ কয়েকটি ব্যাংক ১ জুলাই থেকে এই সুদহার কার্যকর করেছিল। তবে কোনো কোনো ব্যাংক তহবিল ব্যয় বেশি থাকায় এই সুদহার কার্যকর করতে পারেনি।

এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএবি ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠক করেন।

রাজধানীর শেরেবাংলানগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের ৯ আগস্ট থেকে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ‘সব ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই এই সুদহার কার্যকর করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, আমানতের সর্বোচ্চ সুদ হবে ৬ শতাংশ। কোনো ব্যাংক কম দিলে সেটা ভিন্ন কথা। ঋণের সুদহার কোনোভাবে ৯ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু সেখানে কিছু ব্যাংকের আপত্তি আছে  ভোক্তা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদ নিয়ে। এ ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদ না মানলেও চলবে।’

বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে মুহিত বলেন, “অর্থনীতির স্বাস্থ্য নিয়ে কথা হলো। কতগুলো ‘ফলস ইমপ্রেশন’ মার্কেটে আছে। সেগুলো নিয়ে আমার কথা বলা উচিত। প্রথম কথা হলো, দেশে কোনো তারল্যসংকট নেই। পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে। এটা খুবই সহায়ক হবে।”

এ ছাড়া আগামী ৮ আগস্ট সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত আসবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত মাঝে মাঝে সঞ্চয়পত্রের সুদহার পর্যালোচনা করি। এর কোনো ঠিক নেই, কোনো কোনো সময় দুই বছর বা তিন বছর লাগে। আবার এক বছরেও হতে পারে। এটা যখন বাজার সুদহারের সঙ্গে বড় ধরনের ব্যবধান সৃষ্টি করে তখনই পর্যালোচনা করা হয়। এই মুহূর্তে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারের সঙ্গে বাজার সুদহারের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। আগামী ৮ আগস্ট আমরা এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেব।’

সংসদে বাজেট প্রস্তাব করার পরের দিন গত ৮ জুন সংবাদ সম্মেলনে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পর্যালোচনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।

সর্বশেষ তথ্য মতে, বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। গত জুন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছে তিন হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা নিট ঋণের লক্ষ্য থাকলেও সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে ব্যাংক আমানতের সুদহার কম থাকায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়ে যায়। সে কারণে অর্থবছর শেষে এ খাতের ঋণ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যায়।