সব ইউএনওকে নিয়ে গোপন তদন্ত, প্রশাসনে তোলপাড়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) শিক্ষা, রাজনৈতিক জীবন ও নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক সম্পৃক্ত করার বিষয়ে একটি গোপন অনুসন্ধান চালাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশের সব জেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ সুপারদের।

চলতি বছরের ২৭ জুন ইস্যু করা চিঠিতে পহেলা জুলাইয়ের মধ্যে একজন ইন্সপেক্টর বা পরিদর্শক পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করা এবং সর্বোচ্চ গোপনীয়তা ও সতর্কতা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়।

কিন্তু বিষয়টি গোপন থাকেনি। প্রায় সব উপজেলার ইউএনওরা বিষয়টি জেনে যায় এবং তারা ক্ষুব্ধ হয়। তবে এ বিষয়ে তাদের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।

সাধারণত সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগের আগেই মনোনীত প্রার্থী সম্পর্কে তদন্ত করে পুলিশ। ওই তদন্ত শেষে পুলিশ যে রিপোর্ট দেয় সেটি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।

কিন্তু সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ শাখা (স্পেশাল ব্রাঞ্চের রাজনৈতিক বিভাগ) থেকে মাঠপর্যায়ে পুলিশ বিভাগের কাছে পাঠানো ওই চিঠি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

চিঠিতে ইউএনওদের সম্পর্কে যেসব তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কর্মকর্তা ও তার বাবার নাম-পরিচয়, স্থায়ী ও কর্মস্থলের থানার রেকর্ড, তিনি স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন ও সেখান রাজনীতি করেছেন কি-না, রাজনৈতিক মতাদর্শ, পরিবার বা নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকলে সে সম্পর্কে তথ্যসহ আরও কয়েকটি বিষয়।

তবে গোপন তদন্তের এই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমামের কাছে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দক্ষিণাঞ্চলের একটি উপজেলায় ইউএনও হিসেবে কাজ করেছেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন ক্যাডার হিসেবে যোগদানের বেশ কয়েক বছর পর নিজ যোগ্যতাবলে যখন ইউএনও হন তখন পুলিশ দিয়ে এ ধরনের অনুসন্ধান করানো অসম্মানজনক।

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, একজন ইউএনও হওয়ার পর তার স্কুল-কলেজের ইতিহাস খোঁজাটাই তো হাস্যকর। কারণ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই এ ধরনের তদন্ত হয়ে গেছে।

ওই কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে ইউএনওদের মধ্যে ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে জনপ্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে তুলেছেন কর্মকর্তারা।

কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকেও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পুলিশের ওই চিঠির কপি ও ভাষা দেখে।

কয়েকজন ইউএনও গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা নিশ্চিত যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এমন কিছু করা হয়নি। পুলিশ হয়তো নিজ থেকেই এটি করেছে প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি হীনমন্যতা থেকে।