রাবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নেতৃত্বে যারা (ছবিতে দেখুন)

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কিছু দূরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহত হন কোটা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারেক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

আহত তারেক বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

চিকিৎসকরা বলছেন, ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করায় তারেকের ডান পা ভেঙে গেছে। আপাতত প্লাস্টার করে রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার না করলে তার পা স্বাভাবিক হবে না। আর তার পুরো শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, তারেকের মস্তিষ্কে বড় ধরনের কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

২ জুলাই কোটা আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারেককে পতাকায় থাকা লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে ছাত্রলীগকর্মী জন স্মিথ। লাথি দিচ্ছে সহসভাপতি রমিজুল ইসলাম রিমু এবং মাঝে শোভন।

এর আগে গত রোববারও কোটা আন্দোলনকারীরা মানববন্ধন করতে গেলে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। দুই দিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী, হামলার ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাবি ছাত্রলীগের ১০-১৫ জন নেতাকর্মী এ হামলায় মূল ভূমিকা পালন করেন।

ছাত্রলীগের রাবি শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু এ দুই হামলার নেতৃত্বে থাকলেও আক্রমণ ও মারধরের সময় তাদের দেখা যায়নি।

আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন কয়েকজন সহসভাপতি এবং সংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্য পদগুলোর কয়েকজন শীর্ষ নেতা।

কোটা আন্দোলনকারী তরিকুল ইসলাম তারেকের ওপর রামদা নিয়ে হামলায় ছাত্রলীগকর্মী লতিফুল কবির মানিক।

রোববার কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণে লতিফুল কবির মানিক নামের একজনকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। রামদা হাতে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া মানিক নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। তিনি ইতিহাস বিভাগে মার্স্টাসের ছাত্র এবং ছাত্রলীগকর্মী।

এখানেও রামদা হাতে হামলায় লতিফুল কবির মানিক (বামে)। বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আহমেদ সজীব (ডানে)। মাঝে পতাকায় থাকা লাঠি হাতে সহসভাপতি শোভন।

এরপরই হাতুড়ি হাতে আক্রমণে আবদুল্লাহ আল মামুনকে দেখা গেছে। তিনি রাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

বাঁশের লাঠি হাতে রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান সিনহা (বামে)। মাঝে রামদা হাতে লতিফুল কবির মানিক। ডান পাশে হাতুড়ি হাতে রাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন।

আক্রমণে ছিলেন রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু। শিশু বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করেন। তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

বাঁশের লাঠি দিয়ে কোটা আন্দোলনকারী তারেককে পেটাচ্ছে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু।

এরা ছাড়া আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণে মূল ভূমিকায় ছিলেন- রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি গোফরান গাজী, মিজানুর রহমান সিনহা, রমিজুল ইসলাম রিমু, সাদ্দাম হোসেন, আহমেদ সজীব, ছানোয়ার হোসেন সারোয়ার, আরিফ বিন জহির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুল জামিল সুস্ময়, হাসান লাবন, ইমতিয়াজ আহমেদ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব, কর্মী জন স্মিথ ও রাশেদ খান।

বাঁশের লাঠি হাতে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন।

এরা সবাই রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া ও মারধর করেন। তবে আক্রমণের একপর্যায়ে এদের মধ্যে কয়েকজনকে আবার মারধরকারীদের ঠেকাতেও দেখা যায়।

বাঁশের লাঠি হাতে রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি গোফরান গাজী (বামে) এবং রমিজুল ইসলাম রিমু (মাঝে)

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বিকাল সোয়া ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে পতাকা মিছিল বের করলে সেখানে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের পতাকা কেড়ে নিয়ে ১০-১৫ জন নেতাকর্মী রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে হামলা করে। এ সময় পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

১ জুলাই আক্রমণে লাঠি হাতে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু।

এর আগে রোববার সকাল পৌনে ১০টা এবং পরে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে তাদের ওপর দুই দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়া হয় এবং কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে পেটা করা হয়।

কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়েছেন রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদ্দাম হোসেন (সামনে) এবং উপ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান আশিক (পেছনে)।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় আহত আমাদের পরিষদের রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ এদিকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করলেও ধাওয়া দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

কোটা আন্দোলনকারীদের লাঠি হাতে ধাওয়ায় রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ (ডানে) এবং সাবরুল জামিল সুস্ময় (বামে)

তিনি বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের নামে জামায়াত-শিবির ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল। ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা তাদের প্রতিহত করেছি। তাদের ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীরা এখন আর কোটা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবন্ধ নেই। তারা এখন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে গিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এজন্য ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের কর্মসূচি করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।’