সংস্কারের অভাবে নষ্ট পাম্প, চরম দুর্ভোগে নওগাঁবাসী

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ
পৌরসভার অবহেলায় গত ৮ মাস ধরে পানি নিয়ে চরম কষ্টে আছে নওগাঁ পৌরবাসীরা। এ বিষয়ে পৌর মেয়রের কাছে থেকে আশার বাণী শোনা ছাড়া পানি সমস্যা দুর করার কোন বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। অভিজ্ঞজনদের মতানুসারে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন না করা হলে কোন অবস্থাতেই এ সমস্যা দূর হবে না।

সেই সময়ের পৌর চেয়ারম্যান আখতার আহমেদ সিদ্দিকীর মেয়াদে ‘১৬ শহর’ প্রকল্পের ( পরবর্তীতে ১৮ শহর প্রকল্প নামে পরিচিত) অধীনে নওগাঁ পৌর এলাকার সীমিত অংশে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পানি সরবরাহের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক অবস্থায় শহরের চকদেব, উকিল পাড়া ও পার-নওগাঁ মহল্লায় ৬ ইঞ্চি ব্যাসের ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ বসিয়ে কয়েকটি পাম্পের সাহায্যে উল্লেখিত এলাকায় দিনে ৩ ঘন্টা পানি সরবরাহ শুরু হয়। এ সময় শহরের নওযোয়ান মাঠ সংলগ্ন নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখলের মাধ্যমে সেখানে ‘পৌর পানি সরবরাহ অফিস’ স্থাপন করা হয়।

তখন পাািন সরবরাহ সুবিধা ভোগের জন্য একজন গ্রাহকে মাসিক ২৫ টাকা বিল পরিশোধ করতে হতো। পরে সেখানে একটি ওভার হেড পানির ট্যাংক নির্মান সহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে পানি বিশুদ্ধ করণ প্লান্ট নির্মান করে নওগাঁ পৌরসভা পানির বিল ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে আবাসিক বিল ১২৫ টাকা নির্দ্ধারণ করে। এ নিয়ে নওগাঁ বাসী আন্দোলন-সংগ্রাম করায় তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যানের দ্বারা লাঞ্চনা-গঞ্জনা ও মামলার স্বীকার হওয়ার ওই আন্দোলন সফলতার মুখ দেখতে পারে না। কোন এক দিন (কোন দপ্তরে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি) মাত্র ১ ঘন্টা শহরের পার নওগাঁ মহল্লায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার পর কথিত ওই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প অচল হয়ে পড়ে।

এ সংক্রান্ত দলিলাদি খুঁজতে গেলে নওগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানায় যে, ওই প্রকল্পটি জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে সম্পন্ন হওয়ার কারণে তাদের দপ্তরে এ সংক্রান্ত কোন কাগজ পত্র নাই। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এ সংক্রান্ত কাগজ পত্রের বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে জনৈক উপ-সহকারি প্রকৌশলী পদ মর্যদার এক কর্মকর্তা ওই দপ্তর পুরনো ফাইল পত্র খুঁজে দেখে জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষে নেদারল্যান্ডের দাতা সংস্থা সকল কাগজ পত্র নিয়ে গেছে। তবে তারা অনুমানের উপর এটুকু তথ্য দিতে পেরেছে যে, সে সময় প্রকল্পের ডিজাইন মতো নিদৃষ্ট ৩০ হর্সের পাম্প না বসিয়ে ১০ হর্সের পাম্প দিয়ে প্রকল্প  শুরু করায় মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে পাম্পগুলো পুরে নষ্ট হওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। তারা আরো জানায় সে সময় প্রায় সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ গ্রাহক পানি সুবিধা ভোগ করতো।

পরবর্তী সময়ে পৌর পানি সরবরাহ শাখার কার্যক্রম বাড়ানো হলে শহরের বিভিন্ন স্থানে ষ্টীল শীটে বানানো এবং প্লাষ্টিকের ৬ ইঞ্চি ব্যাসের ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ বসিয়ে পাম্পের মাধ্যমে শহরের পুরোনো পৌর এলাকায় বৈদুতিক পাম্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ চালু করা হয়। এ সময় প্রথম দিকে দিনে দু-দফায় দিনে ৪ ঘন্টা ও পরে দিনে ৮ ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হতো। পরবর্তীতে এই পানি সরবরাহ দিনে ১০ ঘন্টা করা হয়। এই ১০ ঘন্টা পানি সরবরাহের জন্য শহরে একাধিক ওভার হেড পানির ট্যাংক থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপোযোগি হয়ে পড়ায় বৈদুতিক মোটরের সাহায্যে (ডিপ টিউবওয়েল) শহরে পানি সরবরাহ চালু রাখা হয়।

দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে এভাবে নওগাঁ পৌর এলাকায় ১২৫ টাকা মাসিক বিলে পানি সরবরাহ চালু রাখা হলেও ভূগর্ভস্থ পানির লাইন সংস্কার না করায় ওই সমস্ত ৬ ইঞ্চি পানির পাইপে লোহার স্তর জমা হয়ে এখন তা প্রায় ২ ইঞ্চিতে নেমে এসেছে। এ কারণে এই পানির সঞ্চালন লাইনে পানির গতি এতোটাই কমে গেছে যে ১০ লিটারের একটি পানির বালতি ভরতে এখন প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। এ ছাড়াও পানির পাইপে লোহার স্তরে পূর্ণ থাকায় সরবরাহকৃত এ পানির রং লাল হয়ে থাকে এবং তা খাবার অনুপোযুক্ত। আবার কোন কোন স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ ফেটে যাবার কারণে সরবরাহকৃত পানিতে ময়লা যুক্ত হচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকার এক পর্যায়ে চলতি বছরের শুরুতেই এক সাথে একাধিক বৈদ্যুতিক মোটর নষ্ট হয়ে গেলে শহরে পানি সরবরাহে বিঘœতা শুরু হয়। এ সময় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার গ্রাহক দিনে মাত্র ১ থেকে ২ ঘন্টা পানি সুবিধা পেতে থাকেন। এ বিষয়ে বছরের শুরুর দিকে পৌর মেয়র নজমুল হক সনির দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, পুরানো পাম্পগুলো নষ্ট হওয়ায় পানি সরবরাহে সাময়িক বিঘœতা দেখা দিয়েছে এবং অচিরেই তিনি নতুন পাম্পের ব্যবস্থা করছেন। গত জুন মাস পর্যন্ত নওগাঁ বাসী এভাবে পানির কষ্ট ভোগ করলেও তা দুর না করে নওগাঁ পৌরসভা টিএলসিসি’র সিদ্ধান্ত অনুসারে ক্ষেত্র ভেদে আবাসিক ও বানিজ্যিক সকল প্রকার পানির বিল ৭৫ টাকা থেকে ২০০শত টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।

পানি সরবরাহে উন্নত ব্যবস্থা না করে বিল বৃদ্ধি বিষয়ে গত মঙ্গলবার সকালে সংবাদের প্রতিবেদক পৌর মেয়রের মতামত জানতে গেলে তিনি জানান, যে ইতিমধ্যে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক উন্নত মানের পাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সরবরাহ লাইনের পাইপগুলো ব্যবহার অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ায় ওই সকল পাইপে নতুন পাম্প সংযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, খুব দ্রুতই পানির সঞ্চালন লাইনের সকল পাইপগুলো বদলানোর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।

অপর এক পশ্নের জবাবে তিনি জানান, পানির দাম দেশের সব স্থানেই টিএলসিসি’র সিদ্ধান্ত অনুসারে বেড়েছে। তিনি আরো দাবী করেন যে একমাত্র নওগাঁ পৌরসভাতেই দিনে ১০ ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে, কিন্তু তিনি এ কথা জানেন না যে বতর্মানে রেশনিং সিষ্টেমে পানি সরবরাহের কারণে একজন গ্রাহক দিনে মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ব্যবহার অনুপোযোগি পানি পেয়ে থাকেন।
যেহেতু ‘পানির(বিশুদ্ধ) অপর নাম জীবন’ তাই জীবন নিয়ে এ রকম খেলা বন্ধ করার দাবী তুলেছে নওগাঁ বাসী। নওগাঁবাসী আশা করছে পৌরসভা অনতিবিলম্বে বিভিন্ন মহল্লায় ব্যবহার যোগ্য পানি ১০ ঘন্টা স্থায়ী ভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

স/আ