সংসদ সদস্যদের জন্য চালু হলো ডাটা প্ল্যাটফর্ম ‘আমার সংসদীয় এলাকা’

জাতীয় সংসদ, বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে অনলাইনে চালু হলো ওয়েব ও মোবাইলভিত্তিক অ্যাপ ‘আমার সংসদীয় এলাকা’। আজ মঙ্গলবার এই অ্যাপটির উদ্বোধন করা হয়।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অগ্রগতি নির্ধারণে সঠিক, নির্ভরযোগ্য এবং সময়োপযোগী তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংসদ সদস্যদের তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে নানাবিধ দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন, আইন প্রণয়ন, বাজেট গ্রহণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের কার্যকর প্রয়োগের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ‘আমার সংসদীয় এলাকা” প্ল্যাটফর্মটি সংসদ সদস্যদের গুণগত মানের তথ্যে প্রবেশাধিকার প্রদানের মাধ্যমে প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে। এই প্ল্যাটফর্মটি মানব উন্নয়নবিষয়ক তথ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত। এর মূল লক্ষ্য হলো সংসদ সদস্যদের তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকার অগ্রগতি নিরূপণ করা, উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্র আবিষ্কার এবং নাগরিকদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরি এম.পি বলেন, সাধারণ জনগণের মুখপাত্র হিসেবে সংসদ সদস্যরা কাজ করেন এবং এসডিজির অগ্রগতি নির্ধারণে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মনে রাখা উচিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কেবল এক দশক বাকি আছে। এরই মাঝে মহামারিটির কারণে একটি বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন এসেছে যা অর্থনীতিকে সচল রাখার পাশাপাশি এসডিজিকে সঠিক পথে রাখা কষ্টসাধ্য করে তুলেছে। ইউএনডিপি প্রদত্ত সংসদীয় শক্তিশালীকরণ এবং সহযোগিতা কিভাবে আমরা সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে পারি? – এই প্রশ্ন থেকে এই প্ল্যাটফর্মটির উৎপত্তি। এই প্ল্যাটফর্মটি সাংসদদের প্রয়োজন দ্বারা চালিত এবং তাদের মতামত এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সংসদীয় এলাকার সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে এবং সাংসদদের প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করতে সহায়তা করবে। শেষ পর্যন্ত এটি দ্রুত এবং ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে ও ভবিষ্যতে সংশোধনের জন্য উন্মুক্ত। অবশ্যই এটি এসডিজিগুলো উপলব্ধি করার জন্য একটি গঠনমূলক প্ল্যাটফর্ম, তবে লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য পরবর্তী ধাপটি অবিরতভাবে সামনে আসা জরুরি বলে আমাদের এখনই সন্তুষ্ট হলে চলবে না।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য হিসেবে থাকাকালীন সংসদ সদস্যদের জন্য ইউএনডিপি-র সহায়তায় আয়োজিত একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমি সেই প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম এবং তাই ইউএনডিপির কাজটি কতটা কার্যকর তা আমি জানি। এই অ্যাপ্লিকেশনটি নাগরিকের প্রয়োজনগুলো শনাক্ত করতে এবং সাংসদদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে সহায়তা করবে। তারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় কাজকে এসডিজি এবং উন্নয়নের জন্য সরকারের বহুল আলোচিত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সংযুক্ত করতে পারবে। এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে ডেটা বিপুল পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ এবং অ্যাপটি ডেটা সংগঠন ও কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকার ডেটা বিশ্লেষণ করে। এটি ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে ব্যাপক উপকার করতে পারে। আমরা একটি তথ্য-নিয়ন্ত্রিত দেশ গড়তে চাই।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি জনাব সুদীপ্ত মুখার্জী তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ইউএনডিপি সংসদের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সংস্থা। এবার এই অ্যাপ্লিকেশনটিতে আমাদের কাজটি সংসদের মূল কাজগুলো সমর্থন করে, যা পরিবর্তনের ধারক হিসেবে কাজ করে। প্ল্যাটফর্মটি এমপিদের তাদের নির্বাচনী এলাকার কোন অংশটি পিছিয়ে রয়েছে তা দেখার অনুমতি দেয় এবং সেই অনুসারে তারা কাজ করেন। এটি সংসদ সদস্যদের ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। এই পুরো যাত্রার অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত এবং আমি আশা করি যে এই অ্যাপ্লিকেশনটি দেশে ভালো ডেটা তৈরিতে ভূমিকা পালন  করবে। তথ্যের শক্তিশালী দিকের সঠিক প্রয়োগের এখনই সময়।

ইউএনডিপির ব্যুরো অব পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রাম সাপোর্টের আওতায় ইনক্লুসিভ পলিটিকাল প্রসেসেস গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পিস বিল্ডিংয়ের প্রধান চার্লস চৌভেল বলেছেন, দেশে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্ভাবন ও সরঞ্জামের প্রয়োজন। বাংলাদেশে যে ধরণের প্রতিভা ও উৎসর্গের দৃষ্টান্ত রয়েছে তা প্রশংসনীয়। পরিবেশ সুরক্ষা এবং বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধাগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো ভালো করার দরকার রয়েছে এবং তথ্যে প্রবেশাধিকার প্রমাণ-ভিত্তিক যুক্তি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল বিষয়। এই অনন্য অ্যাপটি অবশ্যই সংসদ সদস্যদের আপ-টু-ডেট রাখতে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে এটুআই প্রোগ্রামের নীতিমালা বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব আনির চৌধুরী ডাটা প্ল্যাটফর্মটি উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এবং গবেষণা ও তথ্য কেন্দ্রের (সিআরআই) ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব প্রমুখ।

ইউএনডিপি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৬০টিরও বেশি সংসদকে সহায়তা প্রদান করছে এবং ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সংসদের সাথে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব বজায় রেখে চলছে। যার মধ্যে সংসদ সদস্যদের জন্য জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, স্পিকারের কার্যালয়ে নীতিমালা সংক্রান্ত সহায়তার পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সহায়তা প্রদান অন্তর্ভুক্ত।

২০১৯ সালে সরকারের সাথে সমঝোতা স্মারকের নবায়নের ভিত্তিতে ইউএনডিপি সংসদ সদস্য এবং সচিবালয়ের সক্ষমতা জোরদার করতে, সংসদ সদস্যদের প্রমাণ ভিত্তিক তথ্যে প্রবেশাধিকার প্রদানে যাত্রা শুরু করে। এই প্ল্যাটফর্মটি একটি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম ছিল যা সরকার এবং ইউএনডিপির ‘এটুআই’ প্রকল্প দ্বারা পরিচালিত।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ