সংরক্ষণে মনোযোগ নেই, বাগান ঘেঁষে আবর্জনার স্তুপ!

রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফার্মেসি বিভাগের ভেষজ ওষধি বাগানটি সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। বাগানটিতে নেই কোনো সীমানা প্রাচীরও। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত লেখা থাকলেও যে কেউই খেয়াল-খুশি মত বাগানে প্রবেশ করছে। ছিড়ে নিচ্ছে গাছের ছাল, পাতা, ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে ডাল-পালা। এমনকি বিভিন্ন ওষধি গাছের চারা তুলে নিয়ে যাওয়ার মত ঘটনাও রয়েছে অনেক।

এদিকে, নিকটেই নব নির্মিত ডাস্টবিন থাকলেও বাগানের গা ঘেঁষেই আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। রাত করে আবার সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাগানের গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত লোকবল ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাগানটি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কাজের জন্য বাগানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে বিভিন্ন জাতের ওষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের উত্তর পাশে প্রায় দেড় বিঘা জমির উপরে বাগানটি তৈরি করা হয়। বাগানটিতে নিম, নিসিন্দা, পাথরকুচি, বাসক, অর্জুন, আকন্দ, তুলসি ইত্যাদিসহ প্রায় চল্লিশ প্রজাতির ওষধি গাছ রয়েছে। তবে বাগানটি অরক্ষিত হওয়ায় স্থানীয় কবিরাজ বা যারা গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানেন তারা প্রায়ই বিভিন্ন গাছ তুলে নিয়ে যান। এতে ব্যবহারিক কাজের জন্য প্রায়ই শিক্ষার্থীরা মাঠে প্রয়োজনীয় গাছ খুঁজে পান না। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের পেছনে একসঙ্গে প্রাণিবিদ্যা, ফার্মেসি এবং প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের তিনটি বাগান। প্রাণিবিদ্যা ও প্রাণ রসায়ন বিভাগের বাগানটিতে সীমানা প্রাচীর থাকলেও ফার্মেসির বাগানে নেই। প্রাণিবিদ্যা ও ফার্মেসির বাগানকে পৃথককারী দেয়াল থেকে শুরু করে ফার্মেসির বাগানের ভেতরের অনেকাংশই জঙ্গলে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন জায়গায় জন্মেছে আগাছা। বাগানের মাঝখানে একটি গাছের সঙ্গে ‘প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত’ লেখা একটি বোর্ড লাগানো রয়েছে। সেটিও জরাজীর্ণ। কোনো রকমে সেটি ঝুলে রয়েছে।

এদিকে, দীর্ঘদিন থেকে বাগানের গা ঘেঁষে আবর্জনা ফেলে স্তুপ করেছে স্টুয়ার্ড শাখার কর্মচারিরা। গত সপ্তাহে বেশ কয়েকদিন কর্মচারিদের সেখানে আবর্জনা ফেলতে দেখা যায়। পাশেই ডাস্টবিন রেখে এখানে কেন আবর্জনা ফেলছেন জানতে চাইলে ছোট একটি গর্ত দেখিয়ে তারা বলেন, ‘ময়লা ফেলে গর্তটি ভরাট করছি।’

ফার্মেসি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাগানটি দেখাশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুজন মালিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বছর দেড়েক আগে একজনকে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে একজন মালি দিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে বাগানটির পরিচর্যা কাজ। আব্দুল আজীজ নামের একজন বর্তমানে বাগানটির পরিচর্যার কাজে দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, ‘বাগানটিতে আমি একাই কাজ করি। বাগান থেকে আমাদের অজান্তে অনেকেই গাছের ছাল, কখনও আবার গাছও তুলে নিয়ে যায়। বাগানের গা ঘেঁষে আবর্জনা ফেলতে কর্মচারিদের নিষেধ করেছিলাম। তারা শোনেনি।’

স্টুয়ার্ড শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার নব কুমার সরকার বলেন, ‘বাগানের সামনে আবর্জনা ফেলার বিষয়টি জেনে আমি কর্মচারিদেরকে নিষেধ করেছি। আর যে আবর্জনাগুলো রয়েছে সেগুলো শীঘ্রই পরিষ্কার করা হবে।’

জানতে চাইলে ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার উজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাগানটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য বিগত প্রশাসনকে বেশ কয়েকবার জানানো হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। বিভাগের অর্থায়নে এত বড় জায়গায় দেয়াল নির্মাণও সম্ভব নয়। আমরা আবারও প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাইবো।’ তিনি বলেন, ‘ময়লা ফেলার ব্যাপারে আমাকে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই স্টুয়ার্ড শাখার সঙ্গে কথা বলে সেটা সরানোর ব্যবস্থা করব।’

 

স/আ