শনিবার , ২১ মার্চ ২০২০ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সংকট ও আতঙ্ক সৃষ্টি মুমিনের কাজ নয়

Paris
মার্চ ২১, ২০২০ ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গোটা জাতি শঙ্কিত। অনিশ্চয়তার আঁধার যেন প্রতিটি মানুষকে ঘিরে ধরেছে। মানুষের এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু মানুষ নিজেদের ফায়দা লোটার পাঁয়তারায় ব্যস্ত। মানুষকে জিম্মি করে কেউ চাইছেন অধিক মুনাফা অর্জন করতে। আবার স্যোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে কেউ চেষ্টা করছেন জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে। প্রযুক্তি এখন সবার হাতের মুঠোয়, কেউ কেউ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানা আজব ভিডিও বানিয়ে টাকা ইনকামের ধান্দা করছেন। কেউ আবার এই ভীতিকর পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত রয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে যারা যেভাবেই ব্যবসায় নেমেছেন, সবারই হাতিয়ার মিথ্যা ও প্রতারণা ও গুজব।

এ ধরনের কাজে জাতির ও নিজের কোনো কল্যাণ নিহিত নেই। একজন মুসলিম কল্যাণশূন্য কোনো কাজে লিপ্ত হতে পারে না। বরং যে কাজে নিজের ও সমাজের কোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, একজনের মুসলিমের দায়িত্ব তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা। বর্তমানে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছাড়চ্ছে। গুজব মানেই ভিত্তিহীন কোনো কথার প্রচার। চাই তা মানুষ হাসানোর জন্য হোক বা মানুষের ভেতর ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য করা হোক। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই গুজব ছড়ানোকে সমর্থন করে না। এগুলো মুনাফিকদের কাজ।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তারা তোমাদের সঙ্গে বের হতো, তবে শুধু বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি পেত। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা তোমাদের ভেতর ছোটাছুটি করত। তোমাদের ভেতর তাদের কথা শোনার (বিশ্বাস করার) লোক রয়েছে। আল্লাহ অত্যাচারীদের সম্পর্কে অবগত আছেন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪৭)। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি : ১. যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, ৩. আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, সে খেয়ানত করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩)

অনেকের মধ্যে নিজের বিশ্বাস প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়, যারা প্রচারিত কোনো সংবাদ নিজের মত, মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূলে হলে তা যাচাইয়ের প্রয়োজন বোধ করে না। পাওয়ামাত্রই প্রচার শুরু করে। ইসলাম এই প্রবণতা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)

হাদিসবিশারদরা এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, কোনো কথা শুনেই প্রচারের প্রবণতা মানুষকে মিথ্যায় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। ফলে সে পৃথিবীতে লজ্জিত হয় এবং পরকালেও তার জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো বিভিন্ন আজব ভিডিও দেখে কিয়ামত চলে এসেছে, দাজ্জাল চলে এসেছে, আকাশে দাজ্জাল দেখা গেছে, ২০২০ সালেই ইমাম মাহাদি চলে আসবে, এসব ভিডিও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অনেকে আবার ম্যাসেঞ্জারে এক অডিও ক্লিপ ছড়াচ্ছেন, যেখানে শোনা যাচ্ছে একজন লোক তার ছেলেকে সতর্ক করে বলছে তার হাসপাতালে অনেক লোক করোনায় মারা গেছে। এভাবে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো ইসলাম সমর্থন করে না। আমাদের উচিত পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। এভাবে মিথ্যা ছড়ালে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন।

মহান আল্লাহ যাচাই-বাছাই না করে কোনো খবর ছড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করো। অজ্ঞতাবশত কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, (না হলে) তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তরের প্রতিটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’   (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)। তাই যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাবিষয়ক বিভিন্ন অমূলক টিপস দিচ্ছেন (যে ব্যাপারে তারা নিজেই কোনো স্বচ্ছ জ্ঞান রাখেন না), যারা রাজনীতি করছেন, তারা কোরআন-বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছেন।

আবার যারা করোনা আতঙ্ক কাজে লাগিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন, তারাও হারাম কাজে লিপ্ত রয়েছেন। মানুষকে জিম্মি করে উপার্জন করা অর্থগুলো তাদের জন্য হারাম হবে। এ অবৈধ সম্পদ পরকালে জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হবে। দুনিয়ার জীবনেও তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৩৮)

নিম্ন আয়ের মানুষকে জিম্মি করে, তাদের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে মজুদদারি ও কালোবাজারি করা জুলুম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করে জুলুম করতে চায়, আমি তাকে বেদনাদায়ক শাস্তি দেব।’ (সুরা হজ, আয়াত : ২৫)

এ আয়াতকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মজুদদারি ও সিন্ডিকেট করাকে হারাম বলেছেন। কেননা এটি গণমানুষের ওপর অবিচার। (আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯১)

আল্লাহ আমাদের সকলকে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ পরিহার করার তাওফিক দান করুন পাশাপাশি

সকল বিপদাপদ ও রোগ-ব্যাধি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

সর্বশেষ - ধর্ম