শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা পাচ্ছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের লোকো মাস্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেল ইঞ্জিন। যাতে প্রথমবারের মতো লোকো মাস্টার (ট্রেন চালক) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) রুম বসে ট্রেন চালাবেন। এর আগে শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বগি নিয়ে নিজেরা গরমে কষ্ট করে যাত্রীদের সেবা দিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে তারা ট্রেন চালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) থেকে শনিবার (৩ এপ্রিল) পর্যন্ত তিনটি ইঞ্জিন রাজশাহী ও ঈশ্বরদীর মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক আমদানি করা ৪০টি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চলে যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে পাঁচটি ঈশ্বরদী লোকশেডে এসে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত করে চারটি ইঞ্জিন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে। কেবল দিনের বেলা রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদী একটি ট্রেন (কপোতাক্ষ) থাকায় সেখানে শুধু ইঞ্জিন লাগিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। এ সময় বাইরের কিছু বিশেষজ্ঞ ছিলেন। যাতে কোনো ধরনের ভুল-ত্রুটি পাওয়া গেলে সংশোধন করে আনুষ্ঠানিকভাবে চালানো যায়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রথম ইঞ্জিন চালিয়েছেন চালক তৌহিদুল ইসলাম (৫৬)। তিনি ২০০৮ সাল থেকে লোকোমোটিভ মাস্টার হিসেবে পশ্চিম রেলে কর্মরত। তার আগে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

নতুন ও অত্যাধুনিক ইঞ্জিন চালানোন পর তৌহিদুল ইসলাম নতুন এক অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, নতুন ইঞ্জিনের কয়েকটি বিশেষ সুবিধা আছে। যার মধ্যে আগে-পিছে ক্যামেরা থাকায় মনিটরের মাধ্যমে সামনে কী আছে তা দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি সুবিধা হয়েছে জিপিএস সিস্টেম থাকায়। এতে চালকের আসনে বসে রাতের আঁধারেও বোঝা যায় ট্রেনটি এখন কোন এলাকায় আছে।

এছাড়া এ ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। কিন্তু তাদের চালানোর জন্য আপাতত সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটার তুলেছিলেন।

জানতে চাইলে ট্রেন চালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন নতুন ইঞ্জিন হিসেবে রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চালিয়েছেন। পরবর্তীতে আব্দুলপুর থেকে আজিমনগর পর্যন্ত ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটার গতিতে চালানো সম্ভব হয়েছে। এর চেয়ে বেশি গতিতে চালানো সম্ভব হয়নি। ট্রেনের দীর্ঘ পথে গরমের সময় লোহা তেতে বেশি গরম হয়ে যায়। আবার শীতের সময় লোহা ঠাণ্ডা হয়ে বেশি ঠাণ্ডা লাগে। তাই সব কালেই চালক হিসেবে কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়। অন্যদিকে যাত্রীরা এসিতে যেতে পারলেও চালকদের এ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। বর্তমানে এটুকুই ভালো লাগা যে এত দিনের কষ্টটা এবার অন্তত দূর হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, এর আগে দেশে ৩ হাজার ২০০ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন ছিল। এবার ৩ হাজার ৩০০ হর্সপাওয়ারের অত্যাধুনিক ৪০টি অত্যাধুনিক ইঞ্জিন পর্যায়ক্রমে পশ্চিম রেলে যুক্ত হবে। ফলে এ রেলপথের গতি আরও বাড়বে। এর মধ্য দিয়ে রেল ভ্রমণ আরো নিরাপদ, আরামদায়ক ও অল্প সময়ে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন।

জি/আর