শিবগঞ্জ আদর্শ হাসপাতালে ভুল অপারেশনে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর এলাকায় বেসরকারি আদর্শ হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুল অপারেশনে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই গৃহবধূ শিবগঞ্জ উপজেলার দুলর্ভপুর ইউনিয়নের গাইপাড়ার মো. কারন আলীর স্ত্রী বেহুলা বেগম (৩২)।
অভিযোগে জানাগেছে, গেল ২৩ নভেম্বর ওই গৃহবধূর প্রসব বেদনা উঠলে তাকে জরুরী ভিত্তিতে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সে রাতেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আসলেমা বেগম বেসরকারি আদর্শ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক রোগীর অভিভাবক রোগিকে আদর্শ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স আসলেমা বেগম বিষয়টি অস্বীকার করেন। ওইদিন রাতেই বেহুলা বেগমের অস্ত্রোপচার করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিসক ডা. সালাউদ্দিন কবির অনিক ও কানসাট বাজার এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিব। অস্ত্রোপচারের পরপরই রোগীর অবস্থা সংকটাপূর্ণ হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান বেহুলা বেগম। শনিবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ বিষয়ে শিবগঞ্জ আদর্শ হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার ক্লিনিকে কোন রোগী মারা যায়নি।
তবে ডা. সালাউদ্দিন কবির অনিক ওই রোগীর অস্ত্রোপচারের কথা স্বীকার করে জানান, সিজারের পরপরই রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে রামেকে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এদিকে রোগীর গাইপাড়া এলাকার পল্লী চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম মাস্টার বেহুলা বেগমের সিজারের পর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেন।
এছাড়া ওই এলাকার ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বহুলা বেগমের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডাক্তারের ভূল চিকিৎসার জন্য বেহুলা বেগমের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ করে কোন লাভ হয় না বলেই ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেননি।
ইউপি সদস্য আরও জানান, ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি- বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো সরকারি বিধিবিধান মেনে অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে ওইসব ক্লিনিকগুলোতে গলা কাটা পয়সা নেয়া বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ফেরদৌস মোহাম্মদ খাইরুল আতার্তকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য আসা কোন রোগীকে হাসপাতালের কোন ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের পাঠানোর ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ক্লিনিকগুলো সরকারি বিধিবিধানকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে জানা যায়, এই সমস্ত গজিয়ে উঠা ক্লিনিকগুলোতে বিভিন্ন ডাক্তারের নাম লিখে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও ওইসব ডাক্তাররা ক্লিনিকগুলোতে থাকেন না। ওইসব ক্লিনিকে ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, প্যাথলোজি, আলট্রাসোনগ্রাফী ডাক্তার, রেডিওলোজী বিভাগের কোন অভিজ্ঞ লোক নেই। এসব ক্লিনিকগুলোতে কিছু মহিলা নিয়োগ করা হয়েছে, যারা শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীদের সাথে যোগসাজস করে সুকৌশলে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীকে ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসে পয়সা আদায় করে।
স/শা