শিবগঞ্জে বছরে বিপুল অস্ত্রসহ গ্রেফতার অর্ধশত: ঠেঁকানো যাচ্ছেনা ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত এলাকাগুলো অনেকটা চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। কোন রকমেই বন্ধ হচ্ছে না অস্ত্রের চোরাচালান। এদের প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী যতটা তৎপর তার চেয়েও বেশি বেপরোয়া অস্ত্র চোরাচালানিরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, পুলিশ-বিজিবি ও র‌্যাবের হাতে শুধু আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক হয়েছে প্রায় অর্ধশত চোরাকারবারি। এসব ঘটনায় উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১১০টি অস্ত্র। আর এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অধিকাংশই পার্শ্ববর্তী ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত। ওইসব এলাকায় কিছুসংখ্যক জায়গাতে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া থাকলেও সিংহভাগ জায়গায় নেই বেড়া। যার কারণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-বিএসএফের টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই দুই দেশের চোরাকারবারিরা একত্রিত হয়ে অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে আসছে। জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার সিংনগর, তেলকুপি, আজতপুর, সাহাপাড়া, নামোচাকপাড়া ও সোনামসজিদ এলাকার বেশ কয়েকজন চোরাকারবারির সঙ্গে আলাপ করে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, প্রায় প্রতিদিনই রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোরাকারবারিদের আনাগোনা বেড়ে যায় সীমান্ত এলাকায়। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে চাহিদামতো যেকোন অস্ত্রের অর্ডার দেয়া হয়। আর সেই মালের টাকা সামীন্ত এলাকায় থাকা একশ্রেণির হুণ্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে চলে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর কাছে। ভারতীয় চোরাকারবারিরা রাতের অন্ধকারে সেই মাল পৌঁছে দেয় সীমান্ত এলাকায়। সেখান থেকেই বাংলাদেশের চোরাকারবারিরা নিয়ে এসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। এসব চোরাচালানের সঙ্গে সরাসরি সহযোগিতা করে ভারতীয় কিছুসংখ্যক বিএসএফ সদস্য। সেই অস্ত্রগুলো বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে ভাড়া করা শ্রমিক। তারা টাকার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়।

আর এই শ্রমিকদেরই কিছু অংশ মাঝে মধ্যে ধরাও পড়ে। কিন্তু অবৈধ টাকার বিনিময়ে খুব সহজেই ছাড়া পেয়ে আবারও জড়িয়ে পড়ে এমন কর্মকাণ্ডে। আর তাদের ছাড়ানোর মূল ভূমিকা পালন করে অস্ত্র আমদানিকারক গডফাদাররা। কিন্তু সেই মূল হোতারা সব সময় থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। যার কারণে ঠেঁকানো যাচ্ছেনা অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা। মূল অস্ত্র ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ধরা গেলে এই অস্ত্র ব্যবসার লাগাম অনেকটা ধরা যেত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবুল এহসান জানিয়েছেন, গেল ২০১৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে প্রায় ৩৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আর এসব ঘটনায় অনেক চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে। চোরাচালান ঠেঁকাতে বিজিবির প্রতিটি সদস্য কঠোর অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

এদিকে র‌্যাব-৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মোহাম্মদ সাঈদ আব্দুল্লাহ আল-মুরাদ জানান, গেল বছরে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪৬টি অস্ত্রসহ ২৭ জনকে আটক করা হয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অপরদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের অভিযানে ২৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তিনি দাবি করেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীরা জাতির শত্র“ তাদের নিমূল করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

 

স/আ