শিবগঞ্জে তোহাখানা মাদ্রাসায় ভারতীয় সনদে সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ঐতিহাসিক সোনামসজিদ এলাকার তোহাখানা নিয়ামতিয়া আলিম মাদ্রাসায় ভারতীয় সনদপত্রে সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগে অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে ওই মাদ্রাসার সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল মালেক মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু সভাপতি বিষয়টি আমলে না নিয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

ফলে আবদুল মালেক উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। যার রিট নম্বর ১২৬৯৩। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত আবেদনকারীর বিষয়টি আমলে নিয়ে এক মাসের মধ্যে সরকারি বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তির জন্য মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে নির্দেশ দেন।

কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের ১৯ এপ্রিল ১৯৮৪ সালের ডি.আই এ/৮৩/প্রশা/২ই-৩/৫৮৮২(৫০) স্মারকের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে সভাপতি একরামুল হককে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তড়িঘড়ি করে নিয়োগপত্র দেন। নিয়োগপত্রের প্রাপ্তির পরও চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারী কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে মাদ্রাসায় যোগদান করেন তিনি। এ সময় ওই মাদ্রাসায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এদিকে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনকারী আবদুল মালেকের আবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ওই মাদ্রসায় সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিয়োগের জন্য একটি পত্রিকায় গত বছরের ১২ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দশজন প্রার্থী আবেদন করেন। ওই বছরের ৩১ মার্চে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি যাচাই বাছাই করে নয়জন প্রার্থীর আবেদন বৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু কাম্য সংখ্যক আবেদন করার পরও কমিটি অজ্ঞাত কারণে একই বছরের ১৯ এপ্রিল পুনরায় একই পত্রিকায় পুনবিজ্ঞপ্তি দেন।

দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তির পর একরামুল হকসহ তিনজন প্রার্থী নতুনভাবে আবেদন করেন। যা সরকারি বিধি বর্হিভূত। পরবর্তীতে ওই বছরের  ৫ মে যাচাই বাছাই কমিটি একরামুল হকসহ ১২ জন প্রার্থীর আবেদন বৈধ ঘোষণা করেন। আরও উল্লেখ রয়েছে- আবেদনকারী একরামুল হক ১৯৮৬ সালে আলিম ও ১৯৮৮ সালে ফাজিল পরীক্ষা পাশের সার্টিফিকেট ভারতের কোলকাতার মাদ্রাসা বোর্ডের সনদপত্র দাখিল করেন। দুটি সনদপত্রে কোলকাতা মাদ্রাসা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর নেই। এছাড়া বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের ১৯ এপ্রিল ১৯৮৪ সালের ডি.আই এ/৮৩/প্রশা/২ই-৩/৫৮৮২(৫০) স্মারকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ মার্চ ১৯৮২ তারিখে মাদ্রাসা বোর্ডেও সিদ্ধান্ত নম্বর ৫ (খ) এবং ৩০ ডিসেম্বর ১৯৮১ তারিখে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের পর ভারত ও পাকিস্থানে অবস্থিত মাদ্রাসা বোর্ড সমূহ হতে পাশ করা কোন ব্যক্তিকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডের কোন মঞ্জুরি প্রাপ্ত মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কিন্তু যাচাই বাছাই কমিটি ওই সার্কুলারকে তোয়াক্কা না করে একরামুল হকের আবেদনপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। যা সম্পূর্ণ বিধি বর্হিভূত।

অপরদিকে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির ২ নম্বর সিদ্ধান্তে উল্লেখ রয়েছে- গত বছরের ৩০ আগস্ট সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ নির্বাচনী সাক্ষাতকার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি আফাজ উদ্দিন এককভাবে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা শুরু করলে কমিটির অন্যান্য সদস্যরা আপত্তি তুলেন।

ফলে সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড ঐক্যমতে না পৌঁছাই বিস্তারিত আলোচনার পর সর্ব সম্মতিক্রমে সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ স্থগিত করণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এরপর ওই মাদ্রাসায় পরিচালনা কমিটি নিয়োগ সংক্রান্তের বিষয়ে কোন আলোচনা বা
সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মামুনুর রশীদ।

এ বিষয়ে একরামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়ার করার কথা স্বীকার করে বলেন- পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করে লেখাপড়া শেষ করে একইভাবে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ভারতীয়
সনদপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- কোলকাতার একটি মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৬ সালে আলিম ও ১৯৮৮ সালে ফাজিল পরীক্ষা পাশের সনদপত্র দেখিয়েছেন। কিন্তু ওই দুটি সনদপত্রে পশ্চিম বাংলা মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের দেয়া সনদপত্রে রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর নেই।

তিনি আরও বলেন- মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাকে নিয়োগ দেয়ায় পহেলা জানুয়ারী মাদ্রাসায় যোগদান করেছেন তিনি।

সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মামুনুর রশীদের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত সুপার ছাড়া অন্য কেউ সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগপত্র দেয়ার এখতিয়ার নেই।

স/অ