শিক্ষকদের ডেকে সংবর্ধনা নিলেন বাদশা এমপি!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজনীতির ৫০বছর উদযাপনে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কাছে সংবর্ধনা নিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। তাঁর ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নাগরিক সংবর্ধনা বলা হলেও অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের আধিক্যই ছিল বেশি। শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে ওই অনুষ্ঠান করা হয় বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।  রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের যেতে বাধ্য করাকে অনৈতিক ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে জানিয়েছেন তারা। যদিও বাদশা এমপি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিরও সদস্য।

জানা গেছে, ফজলে হোসেন বাদশা এমপির ৭০তম জন্মদিন ও রাজনৈতিক জীবনের ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর শাখার কয়েকজন শীর্ষ নেতার তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সভায় মতবিরোধ দেখা দেয়ায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে মনোমালিন্যও হয়। পরে অনেকেই আর এই কমিটিতে থাকেননি। তবে বাদশা এমপির রাজনৈতিক জীবনের ৫০বছর পূর্তিকে ‘স্মরণীয়’ করে রাখতে নাগরিক কমিটির নামে বেশ কয়েকজন উদ্যোগ নেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য বেশ কিছুদিন আগে থেকেই নগরীজুড়ে বাদশা এমপির ছবি সংবলিত পোস্টার সাঁটানো হয় দেয়ালে দেয়ালে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালায় তাঁর অনুসারীরা। পরে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চিঠিও করা হয়। কিন্তু আয়োজকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় আমন্ত্রণপত্রের শেষে আহ্বায়কের নামও লেখা হয়নি। লেখা হয়েছে-‘উদযাপন কমিটি ’।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখকদের সংগঠন কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার। তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের পেছনে রয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা। অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্যে প্রথম যে মিটিং হয়েছিল, সেখানে আমাকেও ডাকা হয়েছিল। পরে আর কোনো কিছুই আমাকে জানানো হয়নি’।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নারীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে নেচে-গেয়ে এমপিকে স্বাগত জানায়। অনুষ্ঠানে প্রতিটি স্কুল ও কলেজের পক্ষ হতে বাদশাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দও জানানো হয়। অনেকেই আবার ক্রেস্ট উপহার দিয়েছেন। মঞ্চে ফজলে হোসেন বাদশা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহীর সাবেক মেয়র আব্দুল হাদী, সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নুরল আলম, ভাষাসৈনিক মোশররফ হোসেন আখুঞ্জি ও বাদশার সহধর্মিনী তাসলিমা বেগম। সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ রাজনীতিক বীরমুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম। অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্সপার্টির নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, চিঠিতে নাগরিক সংবর্ধনার কথা বলা হলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য মহানগরীর সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। রাজনৈতিক কর্মসুচি পালনে যোগ দিতে বলায় বেশির ভাগ শিক্ষকই বিব্রত হয়েছেন। তবে ‘রোষানল’ এড়াতে শিক্ষকরা এক রকম বাধ্য হয়েই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক কলেজের অধ্যক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল-কলেজ প্রধানরা জানান, টানা তিনবারের মেয়াদে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফজলে হোসেন বাদশা। এ সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিও ছিলেন। এ কারণে তাঁর এক ধরনের প্রভাব রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এজন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের যেতে বলা হয়েছিল আয়োজকদের পক্ষ হতে। কিন্তু এরকম অনুষ্ঠানে শিক্ষকরা মনের বিরুদ্ধেই হাজির হয়েৈিছেলন বলে স্বীকার করলেও ভয়ে কেউ-ই নাম প্রকাশ করতে চান নি।

এই অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস প্রামানিক দেবু বলেন, ‘বাদশা ভাইয়ের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। তিনি লড়াই-সংগ্রামের মধ্যেই সারাজীবন রাজনীতি করেছেন। তাই তাঁর রাজনীতির ৫০বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতেই নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়’।

বাদশা এমপির জন্মদিন ও রাজনৈতিক জীবনের ৫০বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে শিক্ষক ডেকে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার সাথে যোগাযোগ করা হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্ত কোনো মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে রাজি হননি।

স/আর