শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এ বছরের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়ার ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের আগে তা শুরু করতে পারছে না বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।এদিকে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরটি দিন দিন যাত্রী ধারণের সক্ষমতা হারাচ্ছে। মূলত একারণেই টার্মিনাল সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।  প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের ধীরগতির কারণে দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে বলে বেবিচক সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৮০ লাখ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে দুই লাখ টন। বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং ইতোমধ্যে সক্ষমতা হারিয়েছে। এবছর যাত্রী হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি  হারানোরও আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ জুন  হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ দেয় সিভিল এভিয়েশন অথরিটি।  এই চারটি প্রতিষ্ঠান হলো— জাপানের নিপপন কায়ো, ওরিয়েন্টাল কনস্যালটেন্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি  কনস্যালটেন্ট, বাংলাদেশের ডিজাইন কনস্যালটেন্টস লিমিটেড। তারা ইতোমধ্যে প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদন দিয়েছে। এছাড়া, তৃতীয় টার্মিনালের বিস্তারিত ডিজাইন রিভিউ, মূল নির্মাণ কাজের দরপত্রের খসড়া, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তদারকি করবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তৎকালীন বেবিচক চেয়ারম্যান এহসানুল গণি চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এবং শেষ হবে ২০২১ সালের এপ্রিলে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সফল লঞ্চিং করা সম্ভব হবে।’

সূত্র জানায়, শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বর্তমান কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, হ্যাঙ্গার, পদ্মা ওয়েল ডিপো  স্থানান্তর করতে হবে। এছাড়া, বেশি কিছু প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দেওয়া জায়গার ভবনগুলোও অপসারণ করতে হবে। মূল নির্মাণ কাজ শুরুর আগে এসব স্থাপনা স্থানান্তর ও অপসারণের জন্য এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি বেবিচক। নির্মাণ কাজের  খসড়া তৈরি হলেও রিভিউ শেষ না হওয়ায় এখনও টেন্ডার ঘোষণা করেনি বেবিচক। দরপত্র ঘোষণা,আবেদন সংগ্রহ,যাচাই-বাছাই,এসব কাজ শেষ করতে আরও আট মাস সময় লাগবে। ফলে এ বছরেও টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছে না বেবিচক।

এদিকে, দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নেওয়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বেবিচকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এসব স্থাপনা অপসারণ শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানায় বেবিচক।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা একেএম নুরুন্নবী বলেন, ‘পাঁচটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো বেশ পুরনো। নানা জটিলতা কাটিয়ে মামলাগুলোর রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় হলে দ্রুত সংকট কেটে যাবে।’

সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ১৩ হাজার  ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন  হবে দুই লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভিভিআইপি কমপ্লেক্স পাঁচ হাজার ৯০০ বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রোন চার লাখ ৯৮হাজার ৫০০ বর্গমিটার। এছাড়া, র‌্যাপিড এক্সিট অ্যান্ড কানেকটিং ট্যাক্সি ওয়ে, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে মূল এয়ার পোর্টের সড়কের কানেকটিভিটি তৈরি করা হবে। এই টার্মিনাল নির্মাণ এ প্রকল্পে  জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) অর্থায়ন করবে।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও  তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম মাকসুদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য বিভিন্ন কাজের টেন্ডার, অকশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বড় একটি প্রকল্পের কাজের জন্য আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্য পুরনো স্থাপনা অপসারণ করে মূল নির্মাণ কাজ শুরু চেষ্টা করছি।