লালপুরে স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ

লালপুর প্রতিনিধি:
নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ফুসে উঠেছে ওই স্কুলে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা সহ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে শোকজ নোটিশ দিলেও একমাসের ছুটি দিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী বা শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিসহ শ্লীলতাহানির উড়ো অভিযোগ উঠলেও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। ঘটনাটি তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে শিক্ষক আব্দুর রহিমের অপসারনসহ তার শাস্তির দাবীতে মঙ্গলবার স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনর করে। স্থানীয় অভিভাবকরাও শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয়। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসনের প্রতিনিধি,শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনরা মঙ্গলবার স্কুলে বৈঠক করেন। শিক্ষার্থীদের চলা কর্মসুচীর মধ্যে তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০০২ সালে চন্ডিগাছা গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহিম ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে ঐ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদে পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেওয়া সহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয় গুলো এলাকায় জানাজানি হলেও সঠিক প্রমাণ ও লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভুগিরা কিছু বলতে না পারায় বার বার ছাড় পেয়ে যান বিদ্যালয়ের বিতর্কিত এই সহকারী শিক্ষক। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একাধিক ছাত্রী শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনে।

বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সর্বমহলে সমালোচোনার ঝড় ওঠে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা শঙ্কায় পড়েন। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও ছাত্র-ছাত্রীরা ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির কাছে বিচার প্রার্থী হন।


স্কুলের শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় অভিভাবকদের আরো অভিযোগ স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিম স্কুলের উঠতি বয়সের তরুনী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করে শ্লিলতাহানি করে আসছেন। এসব বিষয়ে লোকমুখে আলোচনার ঝড় ওঠে। তার অপসারন দাবীসহ শাস্তির দাবীতে শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাধে। অবস্থা বেগতিক দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ৭ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য শোকজ নোটিশ দেয় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। নোটিশের জবাব দেওয়ার আগেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অভিযুক্ত শিক্ষককে ৭ দিনের ছুটি দেয় ম্যানেজিং কমিটি।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ নেই। তাই কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছেনা। তিনি সত্যি অপরাধী না চক্রান্তের শিকার তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর ঘটনাগুলো স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন,শিক্ষা বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে তাকে এক মাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক খাইরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সিল্কসিটি নিউজকে জানান, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধের অভিযোগ এখন মুখে মুখে। লোক সমাজে আমাদের মুখ দেখানো দায় হয়েছে। প্রকৃত সত্য কি তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। মঙ্গলবার ঘটনাটি নিয়ে একদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিরা বৈঠক করেন। অপরদিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের বিচার ও অপসারন দাবীতে বিক্ষোভ করেছে। বৈঠক শেষে তাকে সাময়িকভাবে বহিস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার শিবলী সাঈদ, আড়বাব ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ইছাহাক আলী,চংধুপইল ইউপি চেয়ারম্যান আবু আল বেলাল,ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইছাহাক আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। এলাকায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনৈতিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বসে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে আপাত:ত সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার সাদ আহম্মেদ শিবলি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমি স্কুল সুপারভিশনে গিয়েছিলাম, কোন শালিশে নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির গঠিত পৃথক দু’টি কমিটির তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ইতিমধ্যে ওই শিক্ষককে স্কুল কর্তৃপক্ষ কারন দশার্নোর নোটিশ দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানও বিষয়টি দেখছেন। রিপোর্ট এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক আব্দুর রহিম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত সমস্তÍ অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

স/শ