‘লকডাউনে’ লোকসানের মুখে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল থেকে শুরু হয়েছে ১৪ দিনের কঠোর বিধি-নিষেধ। সকল গণপরিবহন চলাচল সকাল থেকেই হয়ে গেছে বন্ধ। তবে চামড়া পরিবহনে আলাদা কোনো নির্দেশনা না থাকায় শুরু হওয়া লকডাউনে চরমভাবে আর্থিক লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ ঘিরে এক সপ্তাহের জন্য শিথিল করা হয়েছিল কঠোর লকডাউন। তবে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধি-নিষেধে নতুন করে যুক্ত হয়েছে লকডাউনে গার্মেন্টসসহ সবধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে। যদিও এ সময়ে ট্যানারি, আড়তদার ও মৌসুমি পাইকারি চামড়া বিক্রেতারা কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করবেন। সূত্র জানায়, এবছর গরুর চামড়ায় ৫ টাকা ও খাসির চামড়ায় ২ টাকা দাম বাড়লেও লকডাউনের কারণে চামড়া সংরক্ষণ ও পরিবহন নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

চামড়ার ব্যবসায় সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার থেকে পুনরায় ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে। কোরবানির দিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ এবং প্রধান মোকাম ও সব ট্যানারি ঢাকায় হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচা চামড়া ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। এসব কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে দেশে প্রায় ২৫০টি ট্যানারি ও কয়েক হাজার আড়তদার রয়েছে।

রাজশাহীতে চামড়া কেনার আড়ৎ ৬০টি। এর মধ্যে সিংহভাগ ব্যবসার নিয়ন্ত্রক ১০ ব্যবসায়ী। আছেন দুই ট্যানারি মালিক। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ কাজে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মচারী জড়িত এবং এ কাজ করে তারা জীবিকা-নির্বাহ করে। রাজশাহী অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ চামড়া সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য অন্তত এক সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। একে চামড়ার দাম কম, সাথে বাজারও মন্দা। এর ওপর ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হওয়ায় ব্যবসায় ধস নামবে বলে আশঙ্কা করছেন চামড়া ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছর রাজধানীতে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর রাজধানীতে লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ছিলো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে ছিলো ২৮ থেকে ৩২ টাকা।

রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা জানায়, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। জেলার ব্যবসায়ীদের ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। কিন্তু তারপরও প্রতিবছর কোরবানির দিন থেকে তারা শুরু করেন চামড়া কেনাবেচা। পাড়া-মহল্লায় গিয়ে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। এর পরে পাইকারি ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয় চামড়াগুলো। এমন কর্মযজ্ঞ চলে দুই-তিন সপ্তাহ ধরে। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ায় এভাবে চামড়ার ব্যবসা তারা করতে পারবেন না।

রাজশাহীর বানেশ^র এলাকার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী সারোয়ার হোসেন জানান, এক থেকে দেড় লাখ টাকার চামড়া কিনি প্রতিবছর। বিক্রি করি পুঠিয়ার বেলপুকুরে। সেখানে ভালো দাম না পেলে নাটোরে নিয়ে যায়। চামড়া কেনাবেচায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হয়। কোরবানির পর চামড়া বেচাকেনা, প্রক্রিয়াকরণ ও পরিবহনের জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ সময় দরকার হয়। জেলার চামড়াগুলো ট্রাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগে যায়। সেখানে এবার ঈদের একদিন পরেই লকডাউন শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।

মহানগরীর পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী শফিউল আলম খন্দকার বলেন, ‘রাজশাহীতে চামড়া রাখার মতো ব্যবস্থা নেই। চামড়ায় লবণ দেওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের কাছে থাকে। এর পরে ট্যানারিতে বিক্রি করা হয়। দাম মেটানোর ব্যাপার থাকায় বিক্রি করতে সময় লাগে। আজ থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু চামড়া কেনাবেচা ও পরিবহন লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়নি। তাহলে এর কী হবে? সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়েও কোনো ঘোষণাও আসেনি। তাই মহা চিন্তায় আছি চামড়া বিক্রি কিংবা ঢাকায় পাঠাতে।’

রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘কোরবানির পরে পশুর চামড়াগুলো কিনে একত্রিত করে, সংরক্ষণ ও বিক্রি করতে সময় লাগে সপ্তাখানেক। কিন্তু শুক্রবার থেকে তো লকডাউন শুরুই হয়ে গেছে। এখন এই চামড়া কী করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ছে।

জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, লকডাউনের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি সবাইকে মানতে হবে। কোরবানির পশুর চামড়ার বিষয়ে আলাদা সিন্ধান্ত নেই। তবে চামড়ার বিষয়ে কিছু একটা ঘোষণা দই-একদিনের মধ্যেই আসতে পারে।’

এএইচ/এস