সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জিকে শামীম।
আর সেই শামীমই র্যাব হেডকোয়ার্টারের ৫০০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন।
শুক্রবার নিকেতনে শামীমের কার্যালয়ে র্যাবের অভিযানে উদ্ধার নথিপত্র থেকে এমনটিই জানা গেছে।
শুক্রবার বিকালে জিকে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, বড় বড় ১৭টি প্রকল্পের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারির কাজ করছেন আটক হওয়া জিকে শামীম।
এসব প্রকল্পের মধ্যে সচিবালয় ও র্যাব হেড কোয়ার্টারও রয়েছে।
নিজেকে জিকে শামীমের পিএস বলে দাবি করা দিদারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, র্যাবের হাতে জব্দ এ বিপুল অর্থ সবই জিকে শামীমের। সচিবালয়, র্যাব হেডকোয়ার্টার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ বড় বড় ১৭টি প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন শামীম।
তার মালিকানাধীন জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে তিনি এসব কাজ পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহ করে দিদারুল ইসলাম জানান, ‘জিকে শামীমের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৫০০ কোটি টাকার র্যাব হেডকোয়ার্টারের কাজ পেয়েছেন। বড় বড় যে দুটি প্রকল্পের কাজ তিনি পেয়েছেন, এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ৪০০ কোটি টাকা এবং পঙ্গু হাসপাতালের ৩৫০ কোটি টাকার কাজ।
এ ছাড়া শামীমের হাতে রয়েছে- সচিবালয়ে ১৫০ কোটি টাকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন, ১৫০ কোটি টাকার কেবিনেট ভবন, ৪০০ কোটি টাকার এনবিআর, ২০০ কোটি টাকার মহাখালী ডাইজেস্টিভ এবং বেইলি রোডে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প।
এর পাশাপাশি জিকে শামীমের হাতে রয়েছে ২০-২৫ কোটি টাকার অ্যাজমা, ২০-২৫ কোটি টাকার ক্যান্সার, ২০-২৫ কোটি টাকার সেবা মহাবিদ্যালয়, ৮০ কোটি টাকার নিউরোসায়েন্স, ৮০ কোটি টাকার বিজ্ঞান জাদুঘর, ১২ কোটি টাকার পিএসসি, ৩০-৬০ কোটি টাকার র্যা ব ফোর্স, ৬৫ কোটি টাকার এনজিও ফাউন্ডেশন এবং মিরপুর-৬ তে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ।’
এসব প্রকল্পের তথ্য দিয়ে দিদার বলেন, ‘সরকারের বড় বড় প্রায় সব প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন স্যার (জিকে শামীম)। সুতরাং স্যারের কাছে কোটি টাকা থাকা কোনো ব্যাপার নয়।’
উলেখ্য, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিকেতনের নিজ কার্যালয়ে অবৈধ অস্ত্রসহ আটক হন জিকে শামীম। এ সময় র্যা বের অভিযানে তার কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা ও এফডিআর উদ্ধার করা হয়।
গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে র্যা বের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, অভিযানে শামীমের কার্যালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নগদ ১ কোটি ৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে। এ ছাড়াও ৭টি শটগান, বিদেশি মুদ্রা ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
শামীমের কাছে এত অর্থ কীভাবে এলো সে প্রশ্নে দিদার এসব তথ্য দিয়ে বলেন, ‘এত বড় একজন ঠিকাদারির কাছে এসব অর্থ থাকা ব্যাপার না।’
এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনাকারী র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘আটক শামীম যদি তিনি নির্দোষ হন, তাহলে কোর্টে এগুলোর ব্যাখ্যা দেবেন। তার জন্য তো সে সুযোগ রয়েছেই। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছি, কোর্টে তার বক্তব্য সঠিক হলে তিনি ছাড়া পাবেন।’
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে জিকে বিল্ডার্স থেকে উদ্ধার নগদ ১ কোটি ৮০ টাকার উৎস জানাতে পারেননি শামীম। টাকাটি অবৈধ উৎস থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সারোয়ার আলম বলেন, নগদ অর্থগুলোর বৈধ উপায়ে উপার্জিত কিনা তা তিনি কোর্টে প্রমাণ করতে পারলে সে দায় থেকে রেহাই পাবেন। অস্ত্রের বিষয়ে সারোয়ার আলম বলেন, তার বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্র অবৈধ কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের কিছু শর্তাবলি থাকে। সেসব ভঙ্গ করেছেন তিনি।
জব্দ এফডিআর প্রসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। কিন্তু আমরা জানি তার মা বড় কোনো ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। সে বিষয়ে তার বক্তব্য জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শামীমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ছিল বলে জানান সারওয়ার আলম।
তিনি বলেন, দেহরক্ষীদের দিয়ে অস্ত্র প্রদর্শন করে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতেন শামীম। এমন অভিযোগ পেয়েছি আমরা। একই সঙ্গে মাদক পাওয়া গেছে, যেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রসঙ্গত রাজধানীর প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার।
তবে তিনি এখন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক।
তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আফসার উদ্দিন মাস্টার।
নিম্নমধ্যবিত্ত ঘর থেকে উঠে এসে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক তিনি। বনানীর ডিওএইচএসে বিলাসবহুল বাড়িতে থাকেন শামীম।
আর গুলশান নিকেতনে ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন শামীম। জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি।
সাধারণ জনগণের কাছে অতটা পরিচিতি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিচিতি পান শামীম।
সেই নির্বাচনে শামীম আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে প্রচারও চালিয়েছিলেন।
তবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলছেন ভিন্নকথা। যুবলীগের নন, জিকে শামীম যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, যুবলীগে শামীমের কোনো পদ নেই। তিনি নিজেই নিজেকে সমবায়বিষয়ক সম্পাদক বলে বেড়ান। এ নিয়ে যুবলীগে কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে। তাকে কয়েকবার এমন মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে বলাও হয়েছে।
বিএনপি থেকে ভোল পাল্টিয়ে তিনি বর্তমানে যুবলীগ নেতা হয়েছেন বলে জানান তিনি।