রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সমঝোতায় কী থাকবে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার কাঠামো নির্ধারণে আজই (১৩ এপ্রিল, শুক্রবার) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার-ইউএনএইচসিআর। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার-ইউএনএইচসিআর’র মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিকের সূত্রে এই সমঝোতার রূপরেখা জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তারা জানিয়েছে, চুক্তির আওতায় প্রত্যাবাসনকে শতভাগ স্বেচ্ছামূলক করতে বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানোর আগে প্রত্যেক শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলবে সংস্থাটি। এছাড়া তারা প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করাসহ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের জন্য ট্রানজিট সাইট নির্মাণ করবে।  একইসঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতা অনুযায়ী সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআর মিলে প্রচারণা চালাবে।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে পুলিশ চেকপোস্টে সহিংসতার পর বহুদিন ধরে চালানো রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। একে নিধনযজ্ঞ বলেছে যুক্তরাষ্ট্রও। এদিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতেও জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার-ইউএনএইচসিআর’র মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিক বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, যদি ও যখন রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো সহায়ক অবস্থা থাকে তখন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিত করাই এই সমঝোতার লক্ষ্য।

মাহেসিক ও বাংলাদেশে পররাষ্ট্র সচিব মোহম্মদ শহিদুল হক জানান, ১৩ এপ্রিল শুক্রবার জেনেভায় এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। এই আলোচনায় জড়িত বাংলাদেশি আরেক কর্মকর্তা বলেন, সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আগে সব শরণার্থীকে যাচাই করে দেখবে ইউএনএইচসিআর। মূলত প্রত্যাবাসনকে শতভাগ স্বেচ্ছামূলক করার জন্যই এটা করা হবে। তিনি আরও বলেন, পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটিই ইউএনএইচসিআর পরিচালনা করবে। তাই ফিরে যাওয়ার জন্য কোনও শরণার্থীর ওপর চাপ দেওয়া হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ইউএ্রনএইচসিআর সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি ট্রানজিট সাইট তৈরি করবে। রাখাইন রাজ্যে অস্থায়ী পুনর্বাসন আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের আগে শরণার্থীদের এসব ট্রানজিট সাইটেই রাখা হবে। তিনি আরও বলেন, সমঝোতার আওতায় জাতিসংঘ সংস্থাটি প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করবে। আর উভয়পক্ষই লোকজনকে মিয়ানমারে ফিরতে রাজি করার জন্য প্রচারণামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

গত ১১ এপ্রিল মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বলেছেন, তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার পরই এটাই ছিল মিয়ানমারের কোনও শীর্ষ কর্মকর্তার প্রথম সফর।

দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারকটি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। এছাড়া বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ইউএনএইচসিআর’র মধ্যে একটি চুক্তির ব্যাপারে কাজ চলছে। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির লক্ষ্য হলো মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হওয়া শরণার্থীদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার পাশাপাশি ইউএনএইচসিআর’কে নিয়মিতভাবে তাদের পরিদর্শন করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত তিন লিন বুধবার রয়টার্সকে বলেন, তার দেশ এপ্রিল মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের জন্য ইউএনএইচসিআর’র সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।

 

বাংলাট্রিবিউন