রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭

কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এঁদের ১ জন নারী, ২ জন শিশু ও ৪ জন বৃদ্ধ।

গতকাল সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ১০ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। একই সঙ্গে কয়েক শ দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনে বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছে। অনেক শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নিখোঁজ থাকারও খবর পাওয়া গেছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাজার হাজার বাসিন্দা আশ্রয় হারিয়ে এক কাপড়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়হারা মানুষ তাদের ক্যাম্পের ঝুপড়ির সব মালপত্র হারিয়েছে। সন্তান-সন্ততিসহ স্বজনের খোঁজ না পেয়ে রোহিঙ্গা অনেক নারী-শিশুর আর্তনাদ চলছে মহাসড়কে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গতকাল রাত ১০টার দিকে বলেন, ‘আগুনে অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় হারিয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয়দের শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও গোটা এলাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্ডন করে রেখেছে। ফলে আমরা এখন পর্যন্ত আগুনে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত হওয়ার সঠিক চিত্র পাচ্ছি না। তবে আগুনে প্রাণহানির যথেষ্ট আশঙ্কাই রয়েছে।’

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি বেশ বড় পরিসরের। গতকাল দুপুর ২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনে ক্যাম্পের ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বালুখালী ক্যাম্পের বেশ কিছু এনজিও অফিস এবং এপিবিএনের একটি ব্যারাকও ভস্মীভূত হয়েছে।

স্থানীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বালুখালী বাজারসংলগ্ন মার্কেট এলাকা। এখানে কয়েক শ দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পরিচালিত দোকানগুলোর একেকটিতে কোটি টাকার বেশি মূল্যের পণ্যসামগ্রী ছিল। এই বাজারসংলগ্ন স্থানীয়দের দু-তিন শ বাড়িঘরও পুড়ে গেছে। ক্যাম্পে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ৭ জন পুড়ে মারা গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আগুনের খবর পেয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলে যান।

অগ্নিকাণ্ডের শুরুতে স্থানীয় লোকজন ও ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আগুনের ব্যাপ্তি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আসে। কক্সবাজার জেলা শহর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ ফায়ার সার্ভিসের সাতটি টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামে। রাত ১০টার দিকে পুরো আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কিভাবে, সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের মুখে নানা রকম তথ্য রয়েছে। এ নিয়ে রোহিঙ্গারা একে অন্যকে দোষারোপ করছে। বালুখালী এলাকার লোকজন জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পটিতে একসঙ্গে কয়েকটি স্থান থেকে আগুন লাগে। কিছু রোহিঙ্গা দাহ্য পদার্থ নিয়ে আগুন লাগিয়েছে-এমন গুজব ছড়িয়েছে। ক্যাম্পটিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ১৬ নম্বর আর্মড ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা ঘটনার সময় ছয়-সাতজন রোহিঙ্গাকে আটকও করেছেন বলে খবর এসেছে। তবে এ বিষয়ে এপিবিএনের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য মেলেনি।

আবদুস শুকুর নামের এক রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্পের ৮ নম্বর ব্লক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। একটি ছনের ছাউনির ঘর থেকে আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দৌড়ে কোনো রকমে তিনি আশ্রয় নেন কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে।

উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন গত রাতে সাংবাদিকদের জানান, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও একেকজন একেক রকম তথ্য দিচ্ছে।

বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ তানজীম জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা জানান, আগুনে ক্যাম্পের বসতি ও রোহিঙ্গাদের জানমালের কতটা ক্ষতি হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ