রোগীদের অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে পারছে না রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ


নিজস্ব প্রতিবেদক :

করোনা পরিস্থিতিতে শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মেডিকেল গ্যাস বা অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বিদ্যামান লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে আরো একটি অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের প্রয়োজনীতা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য বিভাগ বরাবর চিটি পাঠিয়ে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা আরো একটি ট্যাংক স্থাপনের কথা ভবছেন। তাদের কাছে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অক্সিজেন সিডিল্ডার পর্যাপ্ত রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রামেক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের কাছে ১০ হাজার লিটারের একটি লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক রয়েছে। এই ট্যাংক থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সংযোগ লাইনের মাধ্যমে ১হাজার ২৫০ বেডের এই হাসপাতালের রোগীদের অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এপ্রিলের পর থেকে রাজশাহীতেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালটির ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের রেখে চিকিৎসা শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট জনিতা সমস্যা অন্যতম উপসর্গ বা শারীরিক অসুস্থতা। এধরণের রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেন থেরাপি অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ বা জরুরী। এর বাইরেও অন্যান্য ওয়ার্ডের রোগীদের অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ছে। ফলে হাসপাতালের ওই সকল ওয়ার্ডেও অক্সিজেনের লাইনের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ১০ হাজার লিটারের একটি ট্যাংক দিয়ে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে মনে করছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে আরো একটি লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক বসাতে স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে।

রামক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান স্বাক্ষরিত এই চিঠিটির অনুলীপি রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা, স্বাস্থ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, আমাদের হাসপাতালে এক হাজার লিটারের যে অক্সিজেন ট্যাংকটি রয়েছে তা দিয়ে সাধারণ সময়ে অন্তত দুই হাজার বেডের হাসপাতাল চালনো সম্ভব। বর্তমান পরিস্থিতিতে একদিন পর পর ট্যাংকটিতে অক্সিজেন লোড করা হচ্ছে। অক্সিজেনের সরবরাহ আমরা ঠিকমতোই পাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে রোগীদের স্বার্থে আমরা আগাম সতর্কতা বা প্রস্তুতি হিসেবে অক্সিজেনের আরো একটি ট্যাংক স্থাপনের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়েছি স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব বরাবর।

তিনি আরো জানান, আমরা এরই মধ্যে ৫টি হাইফ্লো অক্সিজেন মিটার পেয়েছি। এছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমেও নির্দিষ্ট রোগীদের অক্সিজেনের চাহিদা পুরণ করা হচ্ছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি নেই বলেও দাবি করেন হাসপাতালটির এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীতে একমাত্র রামেক হাসপাতাল শুরু থেকেই করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালটিতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও তারা স্বল্প জনবল নিয়েই সব ধরণের রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্তের জন্য হাসপাতালটিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আলাদা একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। যেখানে হাসপাতালের নিজস্ব জনবল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর আগে গত বছর ডেঙ্গু মহামারির মধ্যেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এর ফলে রাজশাহীসহ এই উত্তরবঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

স/রা