চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

রিয়াল-ম্যানসিটি ম্যাচে কারা হাসবে, যা বলছেন দুই কোচ

স্পোর্টস ডেস্ক :

ইতোমধ্যে প্রথম দল হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে ইন্টার মিলান। তাদের প্রতিপক্ষ কারা, তা জানতে আর কিছু সময়ের অপেক্ষা। আজ (১৭ মে) রাতেই ইউরোপীয় দুই পরাশক্তি দল রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটি মহারণে নামছে। এর আগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দু’দলের প্রথম লেগ ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয়েছিল। এবার ম্যানসিটির ঘরের মাঠ ইতিহাদ প্রস্তুত দ্বিতীয় লেগ আয়োজনে। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মুখোমুখি হবে দু’দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখন পর্যন্ত মাদ্রিদ-সিটি ৯ বার মুখোমুখি হয়েছে। দু’দলই জিতেছে সমান তিনটি করে, বাকি তিনটি ম্যাচ ড্র।

এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় মৌসুমে শেষ চারের দ্বৈরথে মুখোমুখি রিয়াল ও সিটি। গত আসরে দুই লেগ মিলিয়ে ১৮০ মিনিট এগিয়ে থাকার পরও অবিশ্বাস্যভাবে রিয়ালের কাছে হেরে বসে সিটি। সেই মিরাকলের পর ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়ে সর্বোচ্চ ১৪তম বারের মতো  কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়। এবার একই মঞ্চে প্রতিশোধের সুযোগ পেপ গার্দিওলার শিষ্যদের সামনে। রিয়ালের ঘরের মাঠে তাদেরকে জয়বঞ্চিত করে গার্দিওলার দল সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে।

তারকাদ্যুতি ও শক্তি-সামর্থ্যে দুই দলের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। প্রথম লেগের লড়াই শেষে এগিয়েও নেই কেউ। দু’দলের ফিরতি লেগের মহারণে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে কোন বিষয়টি? মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তির মতে, এই ধরনের ম্যাচে সাহসী হওয়াটা জরুরি। অন্যদিকে কৌশলী উত্তর দিয়েছেন গার্দিওলা। তার মতে, যে দল জয়ের যোগ্য, আশা করি তারাই জিতবে।

ইউরোপীয় ফুটবলে ঝড় তুলছে সিটি। চলতি মৌসুমে ট্রেবল জয়ের পথে দারুণ গতিতে ছুটছে তারা। গেল আসরের বদলা এবার নিশ্চয়ই নিতে চাইবে ম্যানচেস্টার সিটি। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে তারা ছেড়ে কথা বলেনি। অন্যদিকে, ৯ বছর পর স্প্যানিশ কোপা দেল রে’র শিরোপা জেতা রিয়ালও দুর্দান্ত ছন্দে আছে। আর মঞ্চটা যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের, রিয়াল মাদ্রিদ তো সেখানে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

লড়াইয়ে নামার আগে রিয়ালের ইতালিয়ান কোচ আনচেলত্তি বলছেন, ‘এই ধরনের ম্যাচের একটি মূল ব্যাপার হলো সাহস। এই পর্যায়ে ব্যক্তিগত ও দলীয় মানের দিক থেকে আমরা সমানে সমান, কিন্তু সাহসই পার্থক্য গড়ে দেয়।’

ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে জয়ী দল না পেলে ট্রাইবেকারে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ নিয়ে ভাবছেন না করিম বেনজেমা ও ভিনিসিয়াস জুনিয়রদের কোচ। তার লক্ষ্য, মূল ম্যাচেই শিষ্যদের কাজ শেষ করতে হবে, ‌‌‘আমরা এটি (টাইব্রেকার) নিয়ে ভাবিনি, কারণ বিষয়টি নিয়ে ভাবা ভুল হবে। এটি এমন এক ম্যাচ যা পেনাল্টি শুটআউটে যেতে পারে, তবে আমরা এ নিয়ে ভাবছি না, আমরা মূল ম্যাচেই জিততে চাই।’

অন্যদিকে, কে ফেভারিট এমন প্রশ্নে প্রথমে সরাসরি উত্তর দেননি আর্লিং হলান্ড ও কেভিন ডি ব্রুইনাদের গুরু গার্দিওলা। তিনি বলছেন, ‘আমি জানি না (কে ফেভারিট)। আমরা এই প্রতিযোগিতায় আছি; কেননা, প্রতি মৌসুমের শেষ পর্যায়ে আমরা এখানে থাকি। যে দল জয়ের যোগ্য, আশাকরি তারাই জিতবে। ভালো পারফরম করতে হবে আমাদের। খেলোয়াড়দের মাথায় এবং হৃদয়ে আমাকে এই বিশ্বাসের বীজটা বুনে দিতে হবে যে, তারা রিয়াল মাদ্রিদকে হারানোর মতো খেলতে পারে। তা না হলে এটা (আমাদের জন্য) খুব কঠিন হয়ে যাবে।’

ম্যাচের বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। একইসঙ্গে নিজের সাফল্য-ব্যর্থতার পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন তিনি, ‘কিছু বিষয় ভিন্নভাবে করার একটা পরিকল্পনা আমার আছে এবং সেটা হচ্ছে আক্রমণে কেবল আরেকটু বেশি জোর দেওয়া। এই কাজটা নির্ভার হয়ে সহজাতভাবে করতে হবে খেলোয়াড়দের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আমি ১০টি সেমিফাইনালে খেলেছি এবং এর মধ্যে হেরেছি সাতটিতে। জয়ের চেয়ে বেশি হেরেছি, সেহেতু এই অনুভূতিটা আমার জানা আছে। ফুটবলে অনেক কিছু আছে, যেগুলো আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, কিন্তু অন্ততপক্ষে চেষ্টা করতে পারবেন। আসন্ন ম্যাচে খেলোয়াড়দের জন্য এটাই আমরা চাওয়া-তারা চেষ্টাটুকু করুক।’

পরিসংখ্যান যা বলছে

ইতিহাদে ২০১৮ সেপ্টেম্বরের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আর কোনো ম্যাচ হারেনি সিটি। লিওঁর বিপক্ষে ওই হারের পর এখন পর্যন্ত ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ২৫টি ম্যাচ খেলেছে গার্দিওলার দল, জিতেছে ২৩টি। দুটি ড্র শাখতার দোনেৎস্ক ও স্পোর্টিং লিসবনের বিপক্ষে, যে দুই ম্যাচ আসলে ছিল ‘ডেড রাবার’, তার আগেই পরের রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলেছিল সিটি।

ঠিক ওই সময়কালে রিয়াল মাদ্রিদ ঘরের মাঠে হেরেছে ৬টি ম্যাচ, ড্র করেছে ৪টি। লিভারপুল হেরেছে ৫টি, ড্র করেছে ৪টি। বায়ার্ন মিউনিখ হেরেছে ২টি, ড্র করেছে ২টি। বার্সেলোনা হেরেছে ৪টি, জুভেন্টাস ৬টি, পিএসজি ৫টি, চেলসি ৫টি। অর্থাৎ, ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে সিটি এতটাই অপ্রতিরোধ্য।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল যতই দাপুটে হোক, নকআউট পর্বে ঘরের মাঠে জিততে ব্যর্থ হওয়ার পর ফিরতি লেগে রিয়ালের পরিসংখ্যান খুব একটা ভালো নয়। বার্নাব্যুতে নকআউট পর্বের প্রথম লেগে না জিতেও ফিরতি লেগ জিতে রিয়াল পরের রাউন্ডে গেছে নয়বারের মধ্যে মাত্র দুইবার—২০০০ ও ২০১৩ সালে। কাকতালীয়ভাবে সেই দুইবারই প্রতিপক্ষ দলটার নামের প্রথম অংশে ‘ম্যানচেস্টার’ ছিল। তবে ‘সিটি’ নয়, সেই নামটি হলো ‘ইউনাইটেড’।

নজর থাকবে যাদের ওপর

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই মৌসুমে সিটির হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেছেন আর্লিং হলান্ড। ১২ গোল নিয়ে চলতি আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা সিটির এই নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকারই। এছাড়া প্রথম লেগে গোল করা কেভিন ডি ব্রুইনাও নজর কাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রিয়ালের হয়ে ৭টি গোল করেছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। এছাড়া ৫ গোল আছে রদ্রিগোর। ৪ গোল করেছেন করিম বেনজেমা। অবশ্য গোল ও অ্যাসিস্ট মিলিয়ে হলান্ডের (১৩) পরেই আছেন ভিনিসিয়াস (১২)।