রিজার্ভ চুরি: ‘একটি শব্দে সন্দেহ’ বাঁচিয়ে দেয় ৯৫ কোটি ডলার’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ স্থানান্তরের আদেশে ‘জুপিটার’ শব্দটি ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের সন্দেহের কারণ ঘটায়। যদিও ঠিক যে কারণে তাদের সন্দেহ হয়েছিল, তা পরে ভুল প্রমাণিত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে পাঠানো অর্থ স্থানান্তরের ওই আদেশগুলোতে নানা ধরনের অসামঞ্জস্য থাকলেও সেসব নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ যে গা করেনি, সন্দেহ হওয়ার পরও তারা যে উদ্যোগী হতে অনেক সময় নিয়েছে, তা উঠে এসেছে রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে।

৩৫টি ভুয়া সুইফট মেসেজে ফেডারেল রিজার্ভের পাঠানো এক বিলিয়ন ডলার স্থানান্তরের আদেশের মধ্যে অধিকাংশ আটকে গেলেও চারটি আদেশে ৮টি কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সে এবং একটি আদেশে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় যাওয়া টাকা আর অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। কিন্তু ফিলিপিন্সে যাওয়া অর্থের পুরোটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে ফেলা হয়, এর একটি বড় অংশ চলে যায় জুয়ার টেবিলে।

রয়টার্সের অনুসন্ধান বলছে, হ্যাকারদের অর্থ স্থানান্তরের আদেশগুলেতে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার শাখার কতগুলো অ্যাকাউন্টে জমা করতে বলা হয়েছিল।

কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তালিকায় জুপিটার নামে একটি অয়েল ট্যাংকার থাকায় ফেডারেল রিজার্ভ কর্মীদের সন্দেহ হয় এবং বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখতে শুরু করেন বলে রয়টার্সের খবর।

অবশ্য তার আগেই পাঁচটি আদেশে ১০১ মিলিয়ন ডলার বেরিয়ে যায় ফেডরেল রিজার্ভের হাত থেকে।

রয়টার্স লিখেছে, ইরানি তেলের ট্যাঙ্কার বা জাহাজ কোম্পানি ‘জুপিটারের’ সঙ্গে এই রিজার্ভ চুরির কোনো যোগযোগ না থাকলেও ওই একটি শব্দেই আরও অর্থ ছাড়ের অনুরোধ আটকে যায়।

নিউ ইয়র্ক ফেডের যে কর্মীরা ওই বিষয়টি সামলেছেন, তাদের একজন রয়টার্সের কাছে ‘জুপিটার’ বিভ্রান্তিতে ৯৫১ মিলিয়ন ডলার ছাড় আটকে যাওয়াকে ‘অপ্রত্যাশিত সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির এ ঘটনা আন্ত ব্যাংক লেনদেন কাঠামোর মেরুদণ্ডে পরিণত হওয়া সুইফট সিস্টেমের কতগুলো ‘উদ্বেগজনক দুর্বলতায়’ আলো ফেলেছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ এবং তাদের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট সার্ভিস ইউনিটের (সিবিআইএএস) ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোও সামনে নিয়ে এসেছে।

রয়টার্স লিখেছে, তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে যেসব অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধ নিউ ইয়র্ক ফেডে পাঠিয়েছিল, সেগুলো ছিল অন্য অনুরোধের চেয়ে ‘ব্যতিক্রমী’।

প্রথমত অর্থ স্থানান্তরের ওই অনুরোধ লেখার ক্ষেত্রে প্রচলিত কাঠামো অনুসরণ করা হয়নি। সেখানে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধ করা হয়েছিল ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত করে না।

রয়টার্স বলছে, ‘সতর্ক সংকেত’ পাওয়ার পরও নিউ ইয়র্ক ফেড প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বেশ ধীরগতিতে, যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রভাবশালী ইউনিটের মধ্যে যোগাযোগ ঘাটতি তৈরি হয়।

এই প্রতিবেদন তৈরির আগে রয়টার্সের প্রতিবেদকরা রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকারী ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছে, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাদের মতামত নিয়েছে, পেমেন্ট মেসেজ, ইমেইল ও নথিপত্র দেখেছে। আর তখনই সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রাতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডে নানা অসঙ্গতি ও অদক্ষতার চিত্র বেরিয়ে এসেছে তাদের সামনে।

“কিন্তু সবচেয়ে হতাশাজনক ছিল নিউ ইয়র্ক ফেডের জড়তা ও দীর্ঘসূত্রতা; যদিও তারা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১২টি আঞ্চলিক ইউনিটের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থাপানার মূল কেন্দ্র,” বলা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

সূত্র: বিডিনিউজ