রাসিক নির্বাচনের এক বছর: আশ্বাসেই আটকে আছে উন্নয়ন-কর্মসংস্থানের ঝাঁপি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের এক বছর পার হয়েছে গতকাল সোমবার। গত বছরের ৩০ জুলাই রাসিকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সাবেক মেয়র ও বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে প্রায় ৮৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি পেয়েছিলেন এক লাখ ৬৩ হাজার ৩৯৪ ভোট। আর বুলবুল পেয়েছিলেন মাত্র ৭৮ হাজার ৪৯২ ভোট। নির্বাচনের সময় মেয়র লিটন রাজশাহী নগরবাসীকে নানা স্বপ্নে বিভোর করে তুলেছিলেন। সেই স্বপ্নডানায় ভর করে নগরবাসীও তাঁকে নিরাস করেনি। ফলে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন লিটন। সেই নির্বাচনের এক বছর শেষে এখন লিটনের সেই অঙ্গীকারগুলো নিয়ে নানা হিসেব-নিকেশ কষতে শুরু করেছেন নগরবাসী। গত এক বছরে নগরবাসী কি পেলেন আর আগামীতে কি পাবেন, বা কি পেলেন না-তা নিয়েও অনেকেই নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। তবে এই এক বছরে রাজশাহীর যে উন্নয়ন হয়েছে-তা উল্লেখ করার মতো কিছুই ঘটেনি বলেই মনে করছেন নগরবাসী। যদিও আগামী চার বছরের মধ্যে রাজশাহীর বিপুল পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মেয়র, কাউন্সিলরসহ রাসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে এখনো সারাংশ অনুযায়ী আশ্বাস এবং স্বপ্নেই আটকে আছে রাজশাহীর উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ঝাঁপি।

২০১৮ সালের রাসিক নির্বাচনের আগে ওই বছরের ১০ জুলাই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৪ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। ১৪ দফার মধ্যে ৮১টি উপদফাও ছিলো। এতে মেয়র নির্বাচিত হলে লিটন রাজশাহীর এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার অঙ্গীকার করা হবে বলে জোর দিয়েছিলেন। এছাড়াও রাজশাহী নগরীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও যোগাযোগসহ নগরীকে মেগাসিটি গড়তে নানা উদ্যোগের কথাও অঙ্গীকারে ছিল। পাশাপাশি নির্বাচিত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গ্যাসসংযোগ দেওয়ারও জোর ঘোষণা দিয়েছিলেন লিটন। তবে নির্বাচনের এই এক বছরের মধ্যে এসবের তেমনকিছুই এখনো চোখে পড়েনি নগরবাসীর। বিশেষ করে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে নগরীর গ্যাস না পাওয়া বাড়ি বাড়ি নতুন করে গ্যাসসংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিটি একেবারেই ধুলোই মিশে গেছে। কারণ এরই মধ্যে সরকার ঘোষণা দিয়েছে দেশের আর কোথাও নতুন করে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। সেই হিসেবে রাজশাহীতেও এই কাজের আর কোনো অগ্রগতি নাই। ২০১৩ সালে যে ১৪ হাজার গ্রাহক গ্যাস সংযোগ পেয়েছেন কেবল তারাই সন্তুষ্ট আছেন। আর বাকিদের পুড়েছে কপাল।

এর বাইরে নগরীর রাস্তা-ঘাটসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়নও এখনো চোখে পড়েনি বলে দাবি করেন তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা দুলাল হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে তো অনেক আশ্বাসই শুনেছিলাম। কিন্তু এই এক বছরে নগরীর কি উন্নয়ন হয়েছে-চোখে পড়ে না। এখনো শুনছি এই হবে, সেই হবে, কিন্তু কবে হবে কে জানে। আমরা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের আশায় ভোট দিয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি। আর ছয় মাসের মধ্যে বাড়িতে গ্যাস দিবে বলেছিল সেটি নাকি আর পাওয়ায় যাবে না শুনছি।’

নগরীর উপশহর এলাকার আরেক বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়নের কথা বলে সবাই ভোট নেই। আদৌ কি সেই উন্নয়ন হয়। তবে আমরা আশা করি মেয়র লিটন হয়তো উন্নয়ন করতে পারবেন। কারণ তাঁদের সরকার ক্ষমতায় আছে। তিনি চেষ্টা করলে আর সরকারের সহযোগিতা পেলে অবশ্যই রাজশাহীর উন্নয়ন হবে। না হলে আগামীতে জনগণই এর জবাব দিবেন।

এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র মতে, গত এক বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত উন্নয়ন বলতে নগরীর ৩০ ওয়াডর্রে অলি-গলির রাস্তাগুলো সংস্কারের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেই অনুযায়ী দ্রুত কাজ শুরু হবে। তবে আগামী ৫ বছরের জন্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে রাসিক। এরই মধ্যে দুটি মেগা প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পাওয়া গেছে। এখন একনেকে পাশ হলেই হয়তো এই কাজগুলো করতে পারবে রাসিক। এগুলো হলো, নগরীর রাস্তা-ঘাট, ঈদগাহ, মসজিদ-মন্দির, ব্রিজ, ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প ও ৭৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২টি জলাধার সংরক্ষণ প্রকল্প।

এছাড়াও আগামী চার বছরের মধ্যে রাজশাহীর বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য আরেকটি ১০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প এবং ৩২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে নগরীর ১৬টি রাস্তা ১৮ ফিট থেকে ৪২ ফিট চওড়াকরণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোও দ্রুত মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক।

তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে রাজশাহীর তেমন কোনো উন্নয়ন আমরা করতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু আগামী ৪ বছরে রাজশাহীকে ঢেলে সাজাতে আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সেই লক্ষ্যে নানা বৃহত্তর প্রকল্প তৈরীর কাজ চলছে। কিছু প্রকল্প এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন একনেকে পাশ হলেই হলো। আর কিছু প্রকল্প আমরা এখনো তৈরী করছি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার জন্য।’

এদিকে এক বছরে নগরবাসীর চাওয়া-পাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।