রাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের খাবার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ!

রাবি প্রতিনিধি:

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিশেষ খাবারের শতাধিক প্যাকেট কেড়ে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগের নেতারা বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলে এ ঘটনা ঘটে। ফলে হলটির অনেক আবাসিক শিক্ষার্থীই স্বাধীনতা দিবসের এই বিশেষ খাবার থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযুক্তরা হলেন- জোহা হলের সভাপতি চিরন্তন চন্দ ও তার অনুসারী ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফারসি বিভাগে শিক্ষার্থী বাঁধন ও ওয়াহিদ। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম ও তার অনুসারী তুষার, মিনাল ও আলামিন প্রমুখ। তাদের সঙ্গে অন্যান্য হলেরো বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য একবেলা বিশেষ খাবারের বরাদ্দ করে কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৩০ টাকার বিনিময়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে হলের ডাইনিং কর্মচারীরা টোকেন জমা নিয়ে খাবার পরিবেশন শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের চিরন্তন চন্দ ও মো. মোমিনসহ অন্তত বিশজন বিনা টোকেনে খাবার নিতে যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত হল কর্তৃপক্ষের নিষেধ সত্ত্বেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে খাবার নিয়ে যায় তারা। তারা প্রত্যেকেই ৫-৭টি করে প্যাকেট নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান। এতে হলটির অন্তত এক’শজন শিক্ষার্থী খাবার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

হল সূত্রে জানা যায়, জোহা হলে ৪৩০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন। আবাসিক শিক্ষার্থী ও হলের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য মোট ৪৮০ প্যাকেট খাবার প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে তাৎক্ষণিক খাবারের ঘাটতি তৈরি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাবার না পাওয়া হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিনদিন আগে আমি বিশেষ খাবারের টোকেন কিনে নিয়েছিলাম। কিন্তু দুপুর এক টার একটু আগে গিয়ে খাবার পাইনি। পরে প্রাধ্যক্ষ স্যার বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে আমাদের দিয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সভাপতি চিরন্তন চন্দ বলেন, ‘হলের প্রাধ্যক্ষ স্যার ছাত্রলীগের সবার খাবার একসাথে দেবে বলে আমরা সেখানে যাই। তবে আমি ডাইনিং এ খুব অল্প সময় থাকার পর চলে আসি। আমাদের আসার পর হলে অনেকে নাম ভাঙ্গিয়ে খাবার নিতে পারে। সে বিষয়ে বলতে পারছি না। আমরা কোনো বেশি খাবারের প্যাকেট নেইনি।’

হল প্রাধক্ষ্য একরামুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকেই আমরা খাবারের প্যাকেটসহ আনুষাঙ্গিক কাজ করছিলাম। খাবার বিতরণ শুরু করলে ছাত্রলীগের প্রায় ২০ জন এসে টোকেন ছাড়াই অনেকগুলো খাবারের প্যাকেট নিয়ে যায়। আমরা বার বার বলার পরও তারা কোনো কথা শোনেনি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের খাবার দিতে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসি।

তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা এখন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘জোহা হলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা কুপন দেখিয়ে খাবার নিয়েছে।’ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়াকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ আবাসিক হলে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। হলের দায়িত্ব পেয়েই এমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগ।

এএইচ/এস