রাবি অধ্যাপক এনামুলের চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকদের ‘গড়িমসি’, থানায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এটিএম এনামুল জহিরের সঠিক চিকিৎসা নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চোখে জখম থাকলেও প্রসাবের সমস্যার কথা বলে ছাড়পত্র দেওয়ায় চিকিৎসকরা তাদের শিক্ষকের চিকিৎসা নিয়ে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্রের ঘটনাকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চোখে জখমের চিহ্ন থাকলেও প্রসাবের সমস্যার কথা বলে ছাড়পত্র দেওয়ার চেষ্টাকে দায় এড়ানো চিকিৎসা বলে দাবি তাদের। এতে শিক্ষক এনামুল সঠিক চিকিৎসা পাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় শিক্ষার্থীদের।

এদিকে, শিক্ষককে মারধরে ঘটনায় আটজনের নাম উল্লেখ করে রাজশাহী কোর্টের অ্যাডভোকেট বজলে তৌহিদ আল হাসান রাজশাহী মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কুদরত-ই-খুদার কাছে ইন্টার্ন প্রিয়াঙ্কা ও কামালসহ আটজনের নামে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন ইন্টার্ন লুৎফর রহমান, রহমান আতিক, হিমেল সাহা, চিন্ময় মৈত্র, আব্দুর রহমান কাজল ও কামাল হোসেন।

প্রথমে শিক্ষক এনামুলকে চেয়ার দিয়ে মাথায় ও চোখে আঘাত করা হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন শিক্ষার্থী কামালসহ কয়েকজন কক্ষের তালা ভেঙ্গে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক এনামুল নিজেকে অসুস্থ বলে দাবি করলেও মারধর থেকে রেহাই পাননি তিনি।

জানা যায়, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত শনিবার শিক্ষক এনামুল হাসপাতালে ভর্তি হন। তার চোখ ও শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলেও মঙ্গলবার শুধুমাত্র ‘প্রসাব’ সমস্যার কথা বলে হাসপাতাল থেকে দেওয়া ছাড়পত্রে তাকে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। পরে হাসপাতাল পরিচালকের নির্দেশে ছাড়পত্র বাতিল করে পুনরায় তাকে ভর্তি করা হয়। তার ডান চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে এবং মাথায় প্রচ- যন্ত্রণা হচ্ছে। ভর্তির পর থেকে তিনি মলমূত্র ত্যাগ করতে পারছেন না। গত সোমবার তিনবার বমিও করেছেন। তবে তাঁর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসক মুহিবুল ইসলাম।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক এনামুলের স্ত্রী নাসরিন নাহার জানান, আমার মেয়ে সাজিয়ার (১১) চিকিৎসার জন্য গত বুধবার হাসপাতালে যাই। ডাক্তারের সঙ্গে কথা শেষে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে আসার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক মেরি প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে আমার স্বামীর ধাক্কা লাগে। প্রিয়াঙ্কা আমার স্বামীকে সরি বলতে বলেন। সরি না বলায় প্রিয়াঙ্কা কামালকে ফোন করে। পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে ভেবে ওই ওয়ার্ডের নার্সরা এনামুলকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পরেই কামালসহ প্রায় বিশ-পঁচিশজন এসে তালা ভেঙ্গে এনামুলকে চেয়ার দিয়ে মাথা ও চোখে আঘাত করে। পরে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আমি তাদের আটকাতে গেলে কামাল আমাকে ধাক্কা দেয়। এতে আমি হাতে আঘাত পাই। এ সময় আমার মেয়ে সাজিয়াকে প্রিয়াঙ্কা আটকে রাখে। পরে নার্সরা পুলিশ ও সিনিয়র ডাক্তারদের খবর দিলে তারা আসলে মারধর বন্ধ হয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এক ডাক্তার প্রিয়াঙ্কাকে শান্ত হতে বললে সে তার রাগ না মেটা পর্যন্ত মারধর করতে বলে। শিক্ষক এনামুল, ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী এবং নার্সদের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারাও একই কথা জানান।

তবে কামালের সঙ্গে কথা বললে তিনি মারধরে জড়িত নন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘মারামারি শেষ হওয়ার পর আমি ঘটনাস্থলে যাই। তারপর সবাইকে আমিই খবর দেই।’

প্রিয়াংকা বলেন, ‘ওই শিক্ষকের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় আমি উনাকে বলি, ‘আপনি দেখে চলবেন না?’ তখন তিনি আমাকে ‘ননসেন্স’ ও অশ্লীল ভাষায় গালি দেন। এ সময় আমার বন্ধুরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন এবং সরি বলতে বলেন।

তবে এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান কোন কথা বলতে রাজি হননি।

ঘটনার পরেরদিন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ওইদিন বিকেলে রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

ভুল সংশোধনী:  যে আট জনের নামে অভিযোগ করা হয়, তাদের মধ্যে ভুলবশত জাহিদ কামাল কনকের নাম লিখা হয়, তবে সেখানে কামাল হোসেন হবে।

স/বি