রাবির দুটি ল্যাবে পড়ে আছে করোনা পরীক্ষার পিসিআর মেশিন, নিরব প্রশাসন

বিশেষ প্রতিবেদক:

অনেকটা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে রাজশাহী বিভাগে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে বিভাগের জয়পুরহাট, নওগাঁ ও বগুড়া হটস্পটে পরিণত হয়েছে। বগুড়ায় গত বুধবার এক বাড়িতে সাতজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই অবস্থায় যত বেশি সম্ভব নমুনা পরীক্ষা করে রোগীদের আলাদা করার কোনো বিকল্প দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিভাগের রাজশাহী ও বগুড়ায় দুটি ল্যাবে এখন দুই শিফটে সর্বোচ্চ ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু দুই শিফটে নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে ল্যাব সংশ্লিষ্টরা একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।

সে ক্ষেত্রে রাজশাহী বিভাগে আরও ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। সেইদিক বিবেচনা করে রাজশাহী হাসপাতালে আরেকটি ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রায় শেষদিকে রয়েছে। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দুটি ল্যাব আগে থেকেই প্রস্তুত থাকলেও সেখানে করোনা পরীক্ষার জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না রাবি কর্তৃপক্ষের অনিচ্ছার কারণে। এমনকি ছুটির ফাঁকে পড়ে আছে ল্যাব দুটি। কিন্তু করোনা পরীক্ষার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে না। অথচ সরকার করোনা ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে হন্নে হয়ে ঘুরছে।

সূত্র মতে, এ্যাপ্লাইড ক্যামেস্ট্রি বিভাগে একসঙ্গে ৪৮টি এবং ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ল্যাবে একসঙ্গে ৯৪টি করোনার নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে এই দুটি ল্যাবে কেনা আরটিপিসিআর মেশিন দুটি বসানো হয়েছে কয়েক বছর আগেই। এগুলো চালুও রয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণাকাজে।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে ল্যাবটি বসানো হচ্ছে এবং রামেকে যে ল্যাবটি এরই মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে সে দুটি ল্যাব বায়োসেফটিক লেভেল-২ তেমনভাবে মানা যায়নি। কিন্তু রাবির দুটি ল্যাবই বায়োসেফটিক লেভেল-২ একেবারে মেনেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেই হিসেবে এই দুটি ল্যাবে করনো পরীক্ষা গেলে সামাজিক দূষণের সম্ভাবনাও একেবারে নাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুটি বিভাগের শিক্ষকদের পক্ষে থেকে প্রয়োজনে ল্যাব চালু করা যেতে পারে বলে মন্তব্যও করা হয়েছে। কিন্তু রাবি প্রশাসনের অনিচ্ছার কারণে এখনো এ দুটি ল্যাব চালুর কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি বিশ্বিবদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে কোন কোন বিশ্বিবদ্যালয়ে করোনা ল্যাব চালুর সক্ষমতা রয়েছে তা জানতে চিঠি দেওয়া হলেও সেটিও গোপন করে যায় রাবি কর্তৃপক্ষ। ফলে ইউজিসি থেকেও এই দুটি ল্যাব চালুর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায়নি।

ওই সূটি আরও জানায়, দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য। কিন্তু সে ক্ষেত্রে রাবি কর্তৃপক্ষ সকল সক্ষমতা থাকার পরেও এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছে। অথচ রাবির দুটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা চালু হলে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহের সঙ্গেই এতে অংশ নিবেন কাজ শেখার জন্য। কিন্তু তাদেরও বঞ্চিত করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে রাবির এ্যাপ্লাইড ক্যামেস্ট্রি বিভাগের ল্যাবের প্রধান ড. তৌফিক আলম  বলেন, ‘আমাদের বায়োসেফটিক লেভেল-২ মেনেই আমরা কাজ করি। তবে করোনার মতো ভাইরাস নিয়ে কখনো কাজ করার অভিজ্ঞতা নাই। তার পরেও কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা এ কাজ করতে আগ্রহী আছি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ল্যাবের সক্ষমতা বাড়াতে আরও কিছু কাজ করতে হবে। করোনা পরীক্ষার জন্য বায়োসেফটিক লেভেল-৩ উপনতি করতে হবে ল্যাবকে। সেটিও হয়তো করা যাবে।’

অন্যদিকে ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ল্যাবের প্রধান ড. আরিফুল হক বলেন, ল্যাবে সক্ষমতা থাকলেই তো আর আমরা এই ধরনের নমুনা পরীক্ষা করতে পারি না। এর জন্য প্রশাসনিক ব্যাপার থাকে। তবে আমাদের মেশিনে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। আমরা সেটি করতে পারব।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে গতকাল কথা বলার জন্য রাবি উপাচার্য আব্দুস সোবহানের মোবাইলে বার বার কল করা হলেও তিনি তার রিসিভ করেননি।

অপরদিকে গত বুধবার পর্যন্ত (১২ মে) আড়াইশ ছাড়ালো রাজশাহী বিভাগের করোনা আক্রান্ত রোগী। আগেরদিন মঙ্গলবার যেখানে ছিলো ২৪৯ জন। গতকাল বুধবার সেখানে গিয়ে দাঁড়ায় ২৬১ জনে। যদিও গতকাল রাজশাহী ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৪২টি। গতকাল ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা গেলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ত বলেও মনে করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকতা গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য।

তিনি বলেন, এখন যত বেশি পরীক্ষা করা যাবে তত আক্রান্তের হার বাড়বে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। আর বেশি বেশি পরীক্ষা করে রোগীদের আলাদা করা গেলে সংক্রমণ ছড়াতে পারবে না। না হলে আরও ব্যাপক হারে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে এ বিভাগে।’

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে গতকাল বুধবার সকালে পাঠানো বিভাগের করোনা চিত্রে দেখা গেছে, মঙ্গলবার রাজশাহী বিভাগে আক্রান্ত বেড়ে ২৬১ জনের মধ্যে রাজশাহীতে ১৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৬, নওগাঁ ৭০, নাটোরে ১৩ জন, পাবনায় ১৬ জন এবং সিরাজগঞ্জে ৬, জয়পুরহাট ৭১ ও বগুড়া ৫১ জন।

স/আ

আরও পড়ুন:

জীবন-সংসারের মায়া ফেলে ছুটছেন করোনার সম্মুক্ষযোদ্ধা রাজশাহীর চিকিৎসক দম্পত্তি