রাবির উর্দু বিভাগের ফল বিপর্যয়: দুই মাসের মাথায় ফের তালা

রাবি প্রতিনিধি:

দুই মাসেও ফল বিপর্যয়ের সমাধান না হওয়ায় ফের বিভাগের অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুর দুইটার দিকে তালা লাগিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে বিভাগের সভাপতি, শিক্ষক এবং পাঁচজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আলোচনায় বসে বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা তারেক নূর।

শিক্ষার্থীদের দাবি, অতিদ্রুত ফলাফল সংশোধন করে সুষ্ঠু ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে জড়িত বিভাগের শিক্ষকদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সেই সাথে ওই শিক্ষকদেরকে কোনো পরীক্ষা কমিটিতে না রাখার দাবিও জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৩৫ জন নিয়মিত ও ৩জন অনিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই প্রথম সেমিস্টারে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। গত ২২ এপ্রিল তাদের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়ে ওই মাসেই শেষ হয়। গত ২৫ আগস্ট তাদের ফল প্রকাশিত হয়। সেই ফলে ৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জনের ফল প্রকাশ হয়। ৬ জন নিয়মিত ও ২জন অনিয়মিত শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশিত হয়নি এবং ৬ জন শিক্ষার্থী একটি করে কোর্সে ফেল করেছেন। ওই দিন ফলাফলে ক্ষুব্ধ হলে বিভাগের অফিস কক্ষে ও সভাপতির কক্ষে তালা লাগিয়ে বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ছাত্র-উপদেষ্টার আশ্বাসে তালা খুলে দেন তারা। এ সময় ছাত্র-উপদেষ্টা অতিদ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

ফলাফলে দেখা যায়, প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষায় ৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪ জন প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তবে দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় মাত্র ৬জন প্রথম শ্রেণি পেয়েছেন। ওমর ফারুক নামে এক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৫৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে তার ফল আসেনি। মো. আলম নামে আরেক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৭৫ পেলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে পেয়েছেন ২.৬৪। ফৌজিয়া তুরাণী নামে এক শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে ৩.৮৩ পেলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে তিনি পেয়েছেন ২.৭৮। মানিক সুমন প্রথম সেমিস্টারে পান ৩.৬৬ কিন্তু দ্বিতীয় সেমিস্টারে পেয়েছেন ২.৭৫। প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৯১ পেয়ে প্রথম হন নিশাত তাসনিম। দ্বিতীয় সেমিস্টারে তিনি পেয়েছেন ৩.২৮। এভাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফল বিপর্যয় হয়েছে।

এ বিষয়ে উর্দু বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ‘ফল প্রকাশের দেড় মাস হয়ে গেলেও প্রশাসন এ বিপর্যয়ের সমাধান দিতে পারেনি। তারা নানাভাবে শুধু কালক্ষেপণ করছে। আজকে (রোববার) সমাধানের কথা থাকলেও ছাত্র উপদেষ্টা সমাধান দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অতি দ্রুত ফল সংশোধন করে সুষ্ঠু ফলাফল প্রকাশের দাবিতে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। ভেতরে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনায় সুষ্ঠু সমাধানের আশায় আছি।’

অবস্থান কর্মসূচিতে আরিফুর রহমান এক শিক্ষার্থী বলেন, চারবার আশ্বাসও দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে পারেননি। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিলো আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ডেট দেওয়া হবে না। কিন্তু আজকে আমাদের পরীক্ষার ডেট দেওয়া হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ফের আন্দোলন নেমেছি।

উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরে সবাই বসে আলোচনা বসেছি। অতি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।’ দুই মাসেও সমাধান না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, ‘আমরা উর্দু বিভাগের শিক্ষকদের ডেকেছি। আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষে সমাধান দেব।’

জি/আর