রাবিতে মহান বিজয় দিবস পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এদিন সকাল সাতটার দিকে শহীদ মিনারে, সাড়ে সাতটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং আটটার দিকে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। এসময় বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

এর আগে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বাদ জুম্মা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও মিলাদ মাহফিল, সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে এদিন প্রশাসনিক ভবনসহ ক্যাম্পসের বিভিন্ন স্থান আলোকসজ্জিত করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।

সকাল নয়টার দিক থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে খেলাধুলা ও সাড়ে নয়টায় শেখ রাসেল মডেল স্কুল মাঠে আনন্দ মেলা হয়। পরে সকাল ১০টায় বিশ^বিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ চত্বরে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জারের প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। দিবসের আরও আয়োজনে সকাল সাড়ে দশটায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে স্কুল শিক্ষার্থীদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

বিজয় দিবস উপলক্ষে এদিন সকাল ১১টায় বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে শহীদদের স্মৃতিচারণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান এবং আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা ছিলেন অমৃতদের পুত্র। এসব ক্ষণজন্মা মনিষী ক্ষণিকের জন্য পৃথিবীতে এসে প্রভা ছড়িয়ে গেছেন। তাঁদের আলোয় আমরা আলোকিত হচ্ছি। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এসব নেতা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

তিনি আরও বলেন, একটি জাতির ইতিহাসে ভাষা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেটা বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন। বিভিন্নভাবে পরিবেশ-পরিস্থিতির বিশ্লেষণে তিনি প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সাথে বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পথে ধাবিত করেছিলেন। আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যেসব মানুষ মুক্তিযুদ্ধে আত্মহুতি দিয়েছেন তাঁদের ত্যাগ ও আদর্শের কথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আপনারা ছড়িয়ে দেবেন।

সভার আলোচক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক আলোচনার শুরুতেই সকল শহীদ শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার চেতনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে তৎকালীন সরকারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত দমন-পীড়নমূলক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু ভূখণ্ড বা জাতিসত্বার স্বাধীনতার জন্য ছিল না। তাতে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির স্পৃহা অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের নানাপ্রান্তে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিল।

আলোচনা সাভায় মফিদুল হক উল্লেখ করেন মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছর পেরিয়ে বিশ্ব বাংলাদেশকে কীভাবে মূল্যায়িত করেছে। এছাড়াও ফরাসি চিন্তাবিদদের দর্শনে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে চিত্রায়িত করেন মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের এই ট্রাস্টি।

আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম। সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামানিক। এছাড়া অন্যান অতিথিদের মধ্যে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, বিভিন্ন অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউট পরিচালক ও শিক্ষকবৃন্দসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

জি/আর