রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়ক সংষ্কার কাজে ধীর গতি: বাড়ছে দুর্ভোগ

সুকুমল কুমার প্রামাণিক, রাণীনগর:
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বর্তমানে জনদূর্ভোগের অপর এক নাম রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়ক। রাণীনগর উপজেলা সদরের গোল চত্বর হতে সিংড়া উপজেলার কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত এই সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিমি। বর্তমানে এই সড়ক খানা-খন্দে পরিণত হয়ে জনদূর্ভোগ চরম মাত্রায় পৌছে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ এই সড়কের সংষ্কার, প্রশস্তকরণ, নতুন সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ ঢিলেঢালে ভাবে চলছে। যেন দেখার কেউ নেই। এই সড়ক সংস্কার কাজ শেষ হতে কত সময় লাগবে তা নিয়েও জনমনে নানান প্রশ্ন উঠেছে। সরকার সড়ক, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কিছু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারণে জনগন যথাসময়ে তার সুফল পাচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষকে এই চরম দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে দ্রুত এই সড়কের সংস্কার কাজের গতি বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নওগাঁ সড়ক ও জনপদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা গোলচত্বর থেকে নাটোরের সিংড়া উপজেলার কালীগঞ্জ বাজার সংযোগ পর্যন্ত প্রায় ২৩ কি: মি সড়কের উভয় পাশে প্রশস্ত করণ, সংস্কার, নতুন সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৪৮ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরে দরপত্রের মাধ্যমে স্পেক্টা ইন্টারন্যাশনাল লি: ও ওয়াইড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামক জয়েন্ট ভেনঞ্চার কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজের সময়সীমা ১ বছর ৪ মাস ১৫ দিন দেওয়া থাকলেও প্রায় অর্ধেক সময় পার হওয়ার পরেও চোখে পরার মতো দৃশ্যমান তেমন কোন কাজ হয়নি। সড়কটি অতি জনগুরুত্বপূর্ন ও উপজেলার পূর্বাঞ্চলের প্রধান সড়ক হওয়ার পরেও ঢিলেঢালে কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর সংস্কার কাজ শুরু করলেও কাজের গতি না থাকায় এখন ধীরগতিতে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে এই সড়কটি। উপজেলার পূর্ব-উত্তরাঞ্চল ও পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকশত গ্রামের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। এই প্রধান সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় সড়কের অধিকাংশ স্থানে পাকা উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানা-খন্দের। কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহন করাসহ যানবাহন চলাচলেও নানান সমস্যা।


এই প্রধান সড়কটি ব্যবহার করেই নানা প্রয়োজনে উপজেলার সমগ্র পূর্বাঞ্চলের মানুষদের প্রতিনিয়তই উপজেলা সদরে আসতে হয় এবং উপজেলার উপর দিয়ে জেলা সদর নওগাঁয় প্রবেশ করে। শুষ্ক মৌসুমে চলাচল করতে পারলেও এই বর্ষাকালে খানা-খন্দে ভরা সড়কে কাদাপানিতে একাকার হয়ে সড়কটি যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। একটু অসাবধান হলেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে অনেকেই। দ্রুতগতিতে সড়কের কাজ সমাপ্ত করা না হলে আরো ভোগান্তিতে পরতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

পথচারী হাসান আলী, কামাল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন পরিবহন চালকরা যানবাহনের ভাড়া ইতিমধ্যে বেড়ে দিয়েছে। যুক্তি হিসেবে চালকরা বলছেন, সড়কের যে বহাল দশা এই অবস্থায় তাদের গাড়ীর যন্ত্রাংশ টিকছে না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে আগের চেয়ে এখন প্রায় দ্বিগুন সময় লাগচ্ছে তাই অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। বর্ষাকালে তো এই সড়কে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই দ্রুত কাজের গতি বাড়িয়ে সড়কটি সংস্কার করা দাবি জানিয়েছেন তারা।

যানবাহন চালক আনোয়ার হোসেন, আব্দুল জলিল, ফরিদসহ অনেকেই বলেন, সড়কের বেহাল দশায় যাত্রীরা এখন আর সব ধরণের গাড়িতে উঠতে চায় না। প্রতিদিনের আয় ক্রমেই কমে যাচ্ছে। রাস্তা ভালো থাকতে আগে যেখানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হতো এখন সেখানে অর্ধেক করাই অনেক কষ্টকর হয়ে গেছে। যারা এই সড়কের উপর নির্ভর করে জীবীকাহ নির্বাহ করে তাদের পরিবারেও অশান্তি দেখা দিয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এই সড়কে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিদিন এ সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছেই। অটোরিক্সা, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই কাজের গতি বাড়িয়ে দ্রুত সড়কটির সস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক প্রতিবেদককে বলেন, কাজের ধীরগতির বিষয়ে পত্র দিয়ে জানানো হয়েছে। তবে ওই পত্র দেয়ার পর থেকে কাজের গতি বেড়েছে। আশা করছি যথাসময়েই কাজ শেষ হবে।