রাণীনগরে চলাচলের রাস্তা কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি দূর্ভোগে ১৫ পরিবার

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার চামটা পশ্চিমপাড়া গ্রামে জনসাধারনের চলাচলের গ্রামীণ রাস্তার মাটি কেটে জমিতে একীভূত করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ফলে এলাকার লোকজন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছেনা। এতে চলাচল করতে না পাড়ায় প্রায় ৫ মাস ধরে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই গ্রামের ১০-১৫ টি পরিবার। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে রাণীনগর থানা পুলিশকে পত্র দিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামের লোকজনের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দ্রুত এঘটনার সুষ্টু সমাধানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের চামটা পশ্চিমপাড়া থেকে গ্রামের মাঠ পর্যন্ত চলা চলের জন্য প্রায় ১৮-২০ বছর আগে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় মাটি কেটে রাস্তা নির্মান করা হয়। রাস্তাটি হরিতলা হয়ে নওদুলি-খানপুকুর রাস্তার ভাটকৈ নামক স্থানে রাস্তার সাথে মিলিত হয়েছে। গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে গ্রামের খালের উপর সংযোগের জন্য ভেল্ট সুইজ গেট নির্মান করা হয়। সেই থেকে ওই রাস্তা দিয়ে এলাকার লোকজন চলাচল করছেন। হঠাৎ করেই চামটা পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি প্রতিবেশী আতাউর রহমানের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে রাস্তায় বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর রাস্তার জায়গা আব্দুর রহমান তার নিজের দাবি করে রাস্তার সমস্ত মাটি কেটে জমিতে একীভূত করে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। ফলে গাড়ি চলাচল করতে না পাড়ায় কৃষি উৎপাদিত ধানসহ বিভিন্ন মালামাল কখনো মাথায় আবার কখনো কাঁধে করে বহন করতে হচ্ছে। ফলে অসহনীয় দূর্ভোগে পরেছেন গ্রামের লোকজন।

ঘটনাটি জানার পর রাণীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে বেড়া তুলে দিয়ে চলাচলের রাস্তা স্বাভাবিক রাখতে নির্দেশ দিয়ে আসেন। এর পরেও একই অবস্থা অব্যাহত থাকলে পারইল ও বড়গাছা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম ১৮ মে সরেজমিন তদন্ত করে ১৯ মে সহকারী কমিশনার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। রাষ্ট্রের উন্নয়নকৃত জনসাধারনের চলাচলের প্রায় ৭০ ফিট রাস্তার মাটি কেটে জমিতে একীভূত করে জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০ মে রাণীনগর থানার ওসির নিকট সুপারিশপত্র দাখিল করেন।

ওই গ্রামের ভুক্তভোগী আব্দুল মজিদসহ কয়েকজন জানান, প্রতিবেশীর সাথে দ্বন্দ্বে রাস্তা কেটে ফেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চলাচল করতে পারছিনা। ফলে ধানসহ বিভিন্ন মালামাল কাঁধে করে বহন করতে হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

ভুক্তভোগী আতাউর রহমান বলেন, রাস্তার ধারে খাস জায়গা থেকে কয়েকটি ইউক্যালেপ্টাস গাছ কেটেছিল আব্দুর রহমান। এ বিষয়টি আমি ইউএনও অফিসে জানিয়েছিলাম। তার পর থেকে বেড়া দিয়ে আমাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। পরে ম্যাজিস্ট্রেট এসে বেড়া তুলে দিয়েছেন। কিন্তু রাস্তার মাটি কেটে জমির সাথে মিশে দেওয়ায় লোকজন চলাচল করতে পারছে না।

ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার তহমিনা বলেন, রাস্তার মাটি কেটে জমিতে একীভূত করায় গ্রামের লোকজন চলাচল করতে পারছেনা। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে গ্রামের লোকজন।

অভিযুক্ত আব্দুর রহমানের ছেলে ওহিদুর রহমান বলেন, আমাদের জায়গার উপর দিয়ে বয়ে চলা রাস্তার ধারে বেশ কিছু গাছ লাগিয়ে ছিলাম। সেই লাগানো গাছ কেটেছি। কিন্তু আতাউর আমাদেরকে হয়রানী করার জন্য ইউএনও অফিসে অভিযোগ করেছে আমরা নাকি রাস্তার খাস জায়গার গাছ কেটেছি। যে কারনে আমাদের নিজস্ব জায়গা দিয়ে আর রাস্তা দিবো না। সিমানা মাপ-যোগ করে রাস্তার পাশে খাস জায়গা রয়েছে সেদিক দিয়ে রাস্তা নির্মান করে চলাচল করুক।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আব্দুর রহমানকে না পেয়ে চলাচল স্বাভাবিক রাখার কথা বলে চলে এসেছি। এর পরেও তারা তাদের অবস্থানে অটল থাকায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওযার জন্য রাণীনগর থানার ওসিকে একটি পত্র দিয়েছি। আসা করছি তিনি দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

রাণীনগর থানার ওসি শাহিন আকন্দ বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা সহকারী কমিশনার এজাহার দায়েরের জন্য একটি সুপারিশ পত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

স/জে