রাজশাহী ‘রেড জোন’ নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক :

স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি ওয়েব পেজে দেখা যায় দেশের ৫০টি জেলার মধ্যে রাজশাহীকেও করোনা সংক্রমণের রেড জোন বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে রাজশাহী আসলে কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলার মধ্যে কয়েকটি জেলায় শনাক্তকৃত করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও সেই জেলাগুলোকে ইয়োলো অর্থাত কম ঝুঁকিপূর্ণ দেখানো হয়েছে। আর বিষয়টি নিয়ে খোদ স্থানীয় প্রশসন ও জনমনে দ্বিধা বিরাজ করছে।

এমন অবস্থায় রাজশাহীকে লকডাউন ঘোষণা করা হলে নতুন করে এই জেলার মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।

রবিবার রাজশাহীর স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, পাবনা জেলায় শনাক্ত ১২৯ ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ১০৮ জন শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে রাজশাহী জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫জন। অর্থাৎ রাজশাহীতে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার তুলনায় শনাক্ত বা আক্রান্ত কম। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েব পেজে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এই দুটি জেলাকে ইয়োলো জোন অর্থাৎ কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

রবিবার রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনসহ (রাসিক) নয়টি উপজেলায় শনিবার পর্যন্ত মোট শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ৭৬ জন (যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে রাজশাহী জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮১জন)। যার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩জন।

তবে রাসিকের স্বাস্থ্য বিভাগসহ ৯টি উপজেলার সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৃত সুস্থ রোগীর সংখ্যা ২৮জন। যা সিভিল সার্জন তার প্রতিদিনকার করোনা সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করছেন না।

ধরণা করা হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগে রাজশাহী জেলায় আক্রান্তদের তথ্য গেলেও সুস্থদের হার সময়মতো না পৌছানোয় জেলাটিকে রেড জোনে ফেলা হয়েছে।

রাজশাহী জেলায় ১২ এপ্রিল প্রথম করোন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রায় ২মাস পেরিয়ে গেলেও সিভিল সার্জনের কাছে বয়স ও জেন্ডার ভিত্তিক আক্রান্তদের প্রকৃত কোন তালিকা নেই। এবিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সবসময় প্রশ্ন এড়িয়ে চলেন ও বিব্রত বোধ করেন।


আরও পড়ুন

করোনা : রাজশাহী বিভাগে একদিনে শনাক্তের রেকর্ড, মোট আক্রান্ত ১,৫৪০


এদিকে সরকারি ওয়েবসাইটে রাজশাহীকে রেড জোন দেখানো হলেও স্থানীয় প্রশসনে এসংক্রান্ত কোন নির্দেশনা এসে পৌছায়নি। রাজশাহী জেলার প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক জানান, রেড জোন করা হলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নির্দেশনা আসতো। আমাদের হাতে এখন পর্যন্ত এমন কোন নির্দেশনা এসে পৌছায়নি। তাই জেলা লকডাউনের কোন প্রশ্নই আসে না।

ডিসি আরো জানান, করোনা আক্রান্তের সরকারি হিসেব মতে রাজশাহী জেলা অন্যান্য অনেক জেলার থেকে ভালো অবস্থানে আছে। তাই আমাদেরকে শঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচল করতে হবে যাতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে না যায়। আমাদের (জনগণের) দায়িত্বশীল পদক্ষেপই বলে দিকে আগামীতে এই জেলা কোন পথে এগুবে।

সরকারি ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যের সাথে রাজশাহীর স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যের বিস্তর ফারাক।

প্রকৃত তথ্যের সাথে সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্যের গড়মিল :

সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) এলাকায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯জন। এই এলাকায় মৃত দেখান হয়েছে একজন। এই তথ্যে কাউকেই সুস্থ দেখানো হয়নি। অথচ রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরা রবিবার জানান, নগরীতে মোট আক্রান্ত ২০জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫জন সুস্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় বারের পরীক্ষায় তাদের নমুনায় নিগেটিভ রিপোর্ট আসে।

বাঘা উপজেলায় আক্রান্ত ৬জন দেখানো হলেও সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনে কোন রোগীকে সুস্থ দেখানো হয়নি। অথচ উপজেলাটির ইউএনওর দেয়া তথ্য মতে আক্রান্তদের মধ্যে ৩জন সুস্থ হয়েছেন। যাদেরকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে।

বাগমারায় ৬জন আক্রাদের মধ্যে ১জনকে সুস্থ দেখানো হয়েছে। অথচ ইউএনও জানিয়েছেন আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হওয়ায় ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ৩জনকে।

পুঠিয়ায় ৯জন আক্রান্তদের মধ্যে ৬জনকে সুস্থ দেখানো হয়েছে। অথচ উপজেলাটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন সুস্থতার ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ৭জনকে।

পাবায় ৫জন আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ দেখানো হয়েছে ২জনকে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও তাই জানিয়েছেন। তানোরে আক্রান্ত ১৩ জনের মধ্যে সুস্থ দেখানো হয়েছে ১জনকে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও তাই জানিয়েছেন। মোহনপুরে আক্রান্ত ৭ জনের মধ্যে সুস্থ দেখানো হয়েছে ৪জনকে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও তাই জানিয়েছেন। দুর্গাপুরে আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে কাউকেই সুস্থ দেখানো হয়নি। অথচ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন ৩জনই এখন সুস্থ।

চারঘাটে ৭জন ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ১ জন আক্রন্ত থাকলেও ১৪ দিন পার না হওয়ায় তাদের নমুনা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা হয়নি।

স/রা