শনিবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহী মহাসড়কে দুই হাট, ভোগান্তি চরমে, টোলের নামে হয়রানি

Paris
নভেম্বর ১৮, ২০২৩ ৯:০৭ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে পুঠিয়ার বানেশ্বর এবং পবার খড়খড়ি এলাকায় বসা দুটি হাটের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দুটি হাট এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক জানযট। আবার ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

বিশেষ করে পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকায় সপ্তাহে দুই দিন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী এবং যাত্রী সাধারণকে। আর খড়খড়ি এলাকায় প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল অন্তত ১১ টা পর্যন্ত লেগে থাকছে যানজট। এখানেও ভোগান্তির পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনা। হাট ইজারার নামে প্রতি বছর সরকারের কোষাগারে যেমন কোটি কোটি টাকা জমা হয়, তেমনি প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটেও ঢুকে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু জনসাধারণের ভোগান্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে ভোগান্তির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সরেজমিন মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কটি এমনিতেই অনেকটা ব্যস্ততম। নাটোর পর্যন্ত দুই লেন হওয়ায় এই রাস্তাটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মাঝে-মধ্যেই ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ২০১৯ সালে এই মহাসড়কে বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১৯ জন আগুন পুড়ে নিহত হয়েছিলেন কাটাখালি এলাকায়। সেখান থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত বানেশ্বর বাজার। কৃষি ফসল কেনা-বেচার জন্য উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহৎ হাটের মধ্যে একটি হলো বানেশ্বর। এই বাজারের একেবারে মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক। বাজার এলাকার কিছু অংশ ফোর লেন হলেও বাঁকি অন্তত ৯০ ভাগই দুই লেন মহাসড়ক। আবার এই বাজারের অধিকাংশ কৃষিপণ্য বিক্রি হয় রাস্তার দুই ধারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের চারদিন এখন বসে হাট। শুক্র-শনি এবং সোম-মঙ্গলবার বসে কলার হাট। আর শনিবার ও মঙ্গলবার বসে মূল হাট। ফলে এই দুই দিন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীসাধারণ ও পথচারীদের। হাটের কলেজ গেট থেকে একেবারে শিবপুর পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে থাকে সেই ভোর থেকে। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

কারণ এ হাটে ভোর বেলা থেকেই শুরু হয় কেনা-বেচা। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলে আসছে এই হাটটি। এখন হাটে কৃষিপণ্য কেনা-বেচার পরিমাণ বেড়েছে ১০ বছর আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন। আবার ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু হাটের বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে একেবারে মহাসড়কের ওপরেই বসে অধিকাংশ দোকান-পাট এবং চলে কৃষি পণ্য কেনা-বেচা কাজ। এতে করে এই হাটের গোটা অংশে যানজাট লেগেই থাকে সপ্তাহের দুদিন। হাটের ভিতর দিয়ে দ্রুতগামী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহন চালাতে হয় শম্বুক গতিতে। তার পরেও অধিকাংশ সময় জটের কারণে যানবাহন আটকে ঘন্টার পর ঘন্টা।

জানতে চাইলে এ হাটে পাট বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুরের নাজমুল হোসেন বলেন, ‘একেবারে রাস্তার ওপরে হাট বসে। পাটের গাড়ীও ঠিকমতো দাঁড় করানো যায় না। আবার রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলোও ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। মনে হয় এই বুঝি ধাক্কা লাগবে গাড়িতে বা শরীরে। গাড়ীর ধাক্কায় এই বাজারে মাল (কৃষি পণ্য) কেনা-বেচা করতে এসে বেশ কয়েকজন কৃষক ও ব্যবসায়ী মারা গেছেন।’

বাজারের ফল ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন, ‘সপ্তাহের দুই হাটের দিন খুব ভিড় থাকে। পায়ে হ্যাঁটিও পার হওয়া যায় না। আবার রাস্তার এপার-ওপার পার হতে য্যায়ে অনেকই আহত-নিহত হচ্ছেন। তাও এই হাটের জায়গা বড় করার কোনো কথা নাই।’

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাসের চালক আব্দুল হক বলেন, ‘এই রাস্তাটি এমনিতেই ব্যস্ততম রাস্তা। যানজট না থাকলে ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ঘন্টায় রাজশাহীতে পৌঁছানো যায়। কিন্তু যানজটের কারণে কোনো দিনই ৬ঘন্টার আগে আমরা পৌঁছাতে পারেনি। এর ওপরে সপ্তাহের দুই দিন বানেশ্বর হাটের কারণে আরও ২০-৩০ মিনিট বা ঘন্টাও পার হয়ে যায় এই হাট পার হতে। বছরের পযর বছর ধরে এভাবে আমাদের মতো চালকসহ হাজার হাজার যাত্রীদের বোগান্তির মধ্যে ফেলানো হচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিকার কওে না।’

জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুই কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে হাটের এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। কিন্তু জায়গার সঙ্কট থাকার কারণে দুই হাটের দিন ভিড় লেগেই থাকছে রাস্তার ওপরে। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটচে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নাই। প্রশাসন যেভাবে হাট বুঝিয়ে দিয়েছে, সেভাবেই আমরা খাজনা (টোল) আদায় করি মাত্র। হাটের উন্নয়ন করতে হলে সেটি প্রশাসন করবে।’

এদিকে পবার খড়খড়ি বাজারে ভোর ৬টায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ঘিরেই মূলত বসেছে এই হাটটি। সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে এখানে হাট। সকাল ১১টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তবে প্রতিদিনই এখানে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সবজি বিক্রির অন্যতম এই হাটের দুই ধারে শত শত দোকান পাটের কারণে ঠিকমতো যান চলাচল করতেও পারে না।

এ বাজারে সবজি কিনতে যাওয়া রাজশাহী নগরীর ব্যবসায়ী মামুন হোসেন বলেন, ‘গত প্রায় দুই বছর ধরে এখানে হাট বসার পর থেকেই আমি প্রতিদিন সবজি কিনতে আসি। সেই সবজি শহরে গিয়ে বিক্রি করি। কিন্তুখুব ঝুঁকি নিয়ে মালামাল কিনতে হয়। একেবারে রাস্তার ওপরে হাট বসার কারণে মালামাল কিনে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে পড়তে হয় ঝুঁকিরমুখে। দুই বছরে এই হাটের রাস্তা পার হতে গিয়ে তিন চার জন মারাও গেছেন।’

এই রাস্তা দিয়ে পাথরবাহী ট্রাক নিয়ে যাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ থেকে ছেড়ে ট্রাকের চালক সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘খড়খড়ি বাজারটাই বসেছে রাস্তার ওপরে। যার কারণে সর্বোচ্চ ১০০ মিটার রাস্তা পার হতে লাগলো ৭ মিনিট। তাও সিঙ্গেল হয়ে পার হতে হলো। দুইটা গাড়ি একসঙ্গে পার হতে পারছে না। এর পরেও গাড়ি পার করার সময় একটু বেখায়াল হলেই মানুষের শরীওে ধাক্কা খাবে। এভাবে রাস্তার ওপরে হাট বসায়ে হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি বাড়ানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা হাট লিজ নিয়ে ব্যবসা করি। টোল আদায় করা আমাদের কাজ। হাটের নিরাপত্তা দেওয়া প্রশাসনের কাজ।’

জানতে চাইলে রাজশাহী প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কের ওপর হাট বসার কথা না। তার পরেও যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তার ওপরে হাট বসিয়ে জান-মালের হুমকির মুখে আমরা ঠেলে দিতে পারি না।’

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর