নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের এক বছরের বেশি সময় পরে পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। ১১১ সদস্যের এ কমিটিতে এবার বাপ-ছেলে দুজনই ঠাঁই পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে। মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী তাঁর ছেলে রায়হানুর রহমান রোমেলকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ঠাঁই দিয়েছেন। রোমেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ও ব্যাকিং বিভাগের শিক্ষার্থী। ছাত্র অবস্থায় যুবলীগে পদ পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও ভালো চোখে দেখছেন না এখানকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর এ নিয়ে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে যুবলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সভাপতি থাকার পরেও গত বছর ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সভাপতি নির্বাচিত হন রমজান আলী। তখনই যুবলীগে দ্বিতীয় বারের মতো তাঁর সভাপতি পদে থাকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিজের ছেলেকেও পদে বসালে সেই ক্ষোভের চিতাই আরো ঘি ঢালা হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর তৃণমূল যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতাকর্মীর কাছে অভিযোগও করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো সমাধান হয়নি। বরং বাপ-বেটা নানা আয়োজনে একসঙ্গে উপস্থিতও থাকছেন কখনো কখনো।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ মার্চ রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের আগেই সভাপতি পদে দ্বিতীয় কোনো প্রার্থী না থাকায় ১২ বছর ধরে একই পদ দখল করে রাখা রমজান আলীকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে দু’জন প্রার্থী থাকায় ভোটের মাধ্যমে আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চুকে।
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চু জানান, গত ৯ জুলাই রাজশাহী মহানগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষরিত ১১১ সদস্যের ওই কমিটিতে সহসভাপতি রয়েছেন ৯ জন, সংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন ৫ জন, সহ-সাধারণ সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন ৩ জন।
তিনি আরো জানান, সংগঠনিক সম্পাদক ৫ জনের মধ্যে একজন হলেন সভাপতি রমজান আলীর ছেলে রায়হানুর রহমান রোমেল। তবে সংগঠনের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চু কোনো উত্তর দেননি।
এদিকে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘বাপ-ছেলে যুবলীগের নেতা এই প্রথম দেখলাম। বাপ সংগঠনটাকে নিজের মতো ব্যবহার করেন। তাই তার ছেলেকে একই সঙগঠনের পদে বসিয়েছেন। সামনের কাউন্সিলে হয়তো বাপ আসতে পারবেন না জেনে এখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে যবুলীগের দায়িত্ব দিতে চাইছেন। অথচ ছাত্র অবস্থায় যুবলীগের পদ পাওয়ার বিষয়টিও বিরল হয়ে রইলো সংগঠনে।’
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের আরেক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাপ-বেটা কিভাবে যুবলীগের নেতা হতে পারে-সেটা জানা নাই। বাপ যুব নেতা হলে তার ছেলে কিভাবে যুব নেতা হয়?’
তবে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী এবং তার ছেলে সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হানুর রহমান রোমেল ভারতে থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
তবে বাপ-বেটা যুবলীগের নেতার এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, ‘যারা পদে থাকেন, আমরা তাদের ওপরই দায়িত্ব দেয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতাদের নাম পাঠাতে। সেখানে তারাই যদি এই ধরনের কাজ করে থাকে, তাহলে দায়ভার তাদেরই। তবে বাপ-বেটা যুবলীগের পদে থাকতে পারবে না সংগঠনের গঠনতন্ত্রে এমন কোনো নিয়ম নাই।’
এর আগে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে রমজান আলী সভাপতি ও মোশারফ হোসেন বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
স/আর