রাজশাহী বিসিক-২ প্রকল্প: ভূমি অধিগ্রহণেই সার, ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন বলে প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরী-২ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করা হয় গত ৪ জুলাই। এরপর নগরীর কেচুয়াতৈল এলাকায় এই প্রকল্পের আওতায় শুধুমাত্র ১৫০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখনো বাকি রয়েছে মাটি ভরাট, রাস্তা-ঘাট, ড্রেন, কালর্ভাট নির্মাণ, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ, সীমানা প্রাচীর, পাম্প হাউজিং, অফিস, পানি সংরক্ষের জন্য পুকুর ইত্যাদি স্থাপনকাজ।

বড় বড় এসব কাজ বাকি রেখেই প্রকল্পের ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রকল্পের প্রাক্কলনিবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিসিক কর্তৃপক্ষ। তবে আদৌ সেইসব কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ওই প্রতিবেদনটি আটকে দিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ভূমি অধিগ্রহণের বাইরে কোনো কাজ না করেও কিভাবে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলো-তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পটি নিয়ে মহাদুর্নীতি করতেই কোনো কাজ না করেই (ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া) অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়কে অবগতি করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটির ভূমি উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। আর বাকি ৬৭ কোটি কোটি টাকা ধরা হয়েছে অন্যান্য কাজের জন্য। এর মধ্যে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ধরা হয়েছে জমি ভরাটের জন্য।

এদিকে গতকাল সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর সিটি বাইপাশ রোডের ধারে কচুয়াতৈল এলাকায় হতে যাওয়া রাজশাহী বিসিকি শিল্পনগরী-২ প্রকল্পটির অগ্রগতি বলতে কেবল সেখানে দেখা যায় একটি ভিত্তি প্রস্থর। ভূমি উন্নয়নকাজের এ ভিত্তি প্রস্থরটি উদ্বোধন করা হয় গত ৪ জুলাই। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিন সেটি উদ্বোধন করেন বলে ভিত্তি প্রস্থরে লিখা রয়েছে। তবে ভিত্তি প্রস্থরের লিখা রংগুলোও এরই মধ্যে উঠে যেতে শুরু করেছে।

যেখানে ভিত্তি প্রস্থরটি উদ্বোধন করা হয়, তার পাশ দিয়েই একটি রাস্তা নেমে গেছে প্রকল্পের ভিতরে। এ রাস্তাটিও আগে থেকেই করা ছিলো। প্রকল্প এলাকার ভিতরে আগে থেকেই দুটি ইটভাটা থাকায় সেখান থেকে ইট পরিবহণের জন্য ভাটা মালিকরা রাস্তাাটি করেছিলেন। এই রাস্তার মাঝখানেই একটি ইটভাটার ইট এখনো পালা করে রাখা হয়েছে। তবে এই ইটভাটাটি আর থাকবে না। প্রকল্প এলাকার মধ্যে পড়ায় সেটি গুড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাটাটির আশে-পাশেই প্রকল্পের আওতায় ভরাট বালু পরিবহণের জন্য রাস্তা নির্মাণে করতে ময়লার স্তুপ জমা করে রাখা হয়েছে। তবে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে আর ট্রাক ঢুকতে না পারায় সেটিও বন্ধ রয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা রাজিব হোসেন।

তিনি জানান, ‘আমার নানীর জমি পড়েছিল এই প্রকল্পের মধ্যে। আমরা সেই হিসেবে ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছি জমির মূল্য বাবদ। কিন্তু এর বাইরে ৩-৪ দিন সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে ময়লা ফেলে যাওয়া ছাড়া তো কোনো কাজ হতে দেখছি না। তাহলে অর্ধেকেরও বেশি কাজ কিভাবে হলো?’

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘ভূমি উন্নয়ন কাজেরও কিছুই হয়নি। বর্ষার কারণে হয়তো ঠিকাদার করতে পারেনি। তাই বলে বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে দাবি করাটা ঠিক হয়নি। এর পেছনে হয়তো বড় ধরনের দুর্নীতির ছক কষে আছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রকল্পের টাকা আগে-ভাগেই শেষ করে দিয়ে পুনরাই টাকা চাওয়ার ফন্দিও হতে পারে এটি।’

এদিকে মাটি ভরাটকাজের ঠিকাদার হাবিবুর রহমান ডলার বলেন, ‘আমার যখন কাজটি পাই। তখন থেকেই বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলে কাদা-পানির কারণে সেখানে ভরাট বালু ফেলতে পারছি না। তবে আশা করছি দ্রুতই কাজটি শুরু করতে পারব।’


এদিকে বিষয়টি নিয়েজানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক হায়দার আলী বলেন, ‘অভ্যান্তরিন রাস্তা নির্মাণের জন্য কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। এর বাইরে কোনো কাজ হয়নি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দ্রুতই কাজটি শুরু হবে। আর মেয়াদ অনুযায়ী আগামী জুলাইয়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের মোট ব্যয়ের অর্ধেক টাকায় ব্যয় হচ্ছে জমি অধিগ্রহণের জন্য। সেই হিসেবে হয়তো অর্ধেক কাজ এগিয়েছে বলা যেতে পারে। তবে অর্ধেকেরও বেশি কাজ হয়েছে-এই ধরনের প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নাই। সেটি হলেও আমার অগচোরে দেওয়া হতে পারে।’

এদিকে প্রাক্কলনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী-২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘ প্রথমে তারা প্রকল্পের ৫৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে অবগত করে। এতে আমরা আপত্তি জানালে পরে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আমরা সেটি নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছি। কারণ জমি অধিগ্রহণ হলে প্রকল্পের বড় জোর ২০ ভাগ কাজ শেষ হয়। সেই হিসেবে কনোমতেই এই প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত ২০ ভাগের ওপরে যায়নি। ফলে যে গতিতে কাজ এগুচ্ছে, তাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

প্রসঙ্গত, বিসিকের আওতায় বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পটি দেশের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং এর ফলে একটি বিশেষায়িত শিল্পনগরী স্থাপন হবে রাজশাহীতে। যার মাধ্যমে এখানকার জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা পূরণ হবে।

স/আর