রাজশাহী আ.লীগসহ সহযোগী সংগঠনের পদ হারাচ্ছেন ১২০৫ অনুপ্রবেশকারী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজশাহী বিভাগে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন জেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃত্ব দখল করেছে বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা ১ হাজার ২০৫ অনুপ্রবেশকারী। পদধারী নয়, এমন সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। কেন্দ্রের সাম্প্রতিক নির্দেশনা অনুযায়ী এসব অনুপ্রবেশকারীকে আগামীতে কোনো পদে রাখা যাবে না বা পদ দেয়া যাবে না।

যারা এখন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন তাদেরও পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দেয়া অথবা বহিষ্কার করার জন্য মৌখিকভাবে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১ নভেম্বর রাজশাহীসহ দেশের সব সাংগঠনিক ইউনিটকে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে নির্দেশনা ও করণীয় নির্দেশ করে চিঠি পাঠিয়েছেন। রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সার্বিক নির্দেশনা দিয়ে ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে দেশের সব ইউনিটকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সবখানে সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। স্থান কাল পাত্র বিবেচনায় দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে কেন্দ্রের অবস্থান শিথিল হবে না বলে জানিয়ে দেন এ কেন্দ্রীয় নেতা।

এদিকে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে কেন্দ্রের এ শক্ত অবস্থানের প্রতিফলন দেখা গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আয়োজনে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ নভেম্বর অনুপ্রবেশকারীরা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি থেকে কাউন্সিলর করে তড়িঘড়ি কমিটি করার উদ্যোগ নেয়। বিএনপি থেকে আসা নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের সভাপতি হওয়ার জন্য তড়িঘড়ি কাউন্সিলের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ কাউন্সিলর বিএনপি জামায়াত থেকে আসা- এমন অভিযোগ কেন্দ্রে পৌঁছায়। শেষ পর্যন্ত একদিন আগে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে সেই কাউন্সিল বাতিল করা হয়।

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌর কমিটিতে। শুধু রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় পদধারী অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ১ হাজার ২০৫ জন। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলায় অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সর্বাধিক, তা হল ৭৪৮ জন। অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার হাত ধরেই ছোট জেলা জয়পুরহাটে গত কয়েক বছরে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ে, যাদের অধিকাংশই নাশকতা মামলার আসামি। এছাড়া বগুড়ায় ১২৬ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১২১ জন অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে জায়গা পেয়েছেন।

সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালিয়ে দেয়া ও বিএনপির অবরোধের সময়ে র‌্যাবের ওপর বোমা হামলা মামলার আসামিরাও দলের বিভিন্ন পদে আসীন হয়েছেন জেলার সাবেক একজন দলীয় এমপির হাত ধরে।

রাজশাহী জেলায় ৯ জন পদধারী অনুপ্রবেশকারীর নাম প্রকাশ করা হলেও এ সংখ্যা তিন শতাধিক বলে দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান। তিনি বুধবার বলেন, যে ৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে তারা বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলের শীর্ষ পদে রয়েছেন। এদের পদে বসানোর দায় নিজ নিজ এলাকার এমপিদের। তাদের বিষয়ে জেলা কমিটির কোনো দায় নেই। এর বাইরে রাজশাহীতে দলের সহযোগী সংগঠন ও অন্যান্য সাংগঠনিক ইউনিটের ছোট বড় পদগুলো অনুপ্রবেশকারীরা দখলে নিয়েছে বলে জানান তিনি। ৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় জেলা কমিটির মতবিনিময় কর্মসূচি রয়েছে। সেই কর্মসূচিতে অনুপ্রবেশকারীদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে বলেও জানান আসাদুজ্জামান।

এদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে ২৭ জন, নাটোরে ১০৪ জন, সিরাজগঞ্জে ১১ জন, পাবনায় ৫৯ জন অনুপ্রবেশকারীর নাম তালিকায় রয়েছে। তবে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একজন পদধারী নেতার নাম প্রকাশ না করে বলেন, মহানগরে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা তিন শতাধিক। এদের মধ্যে বিএনপির আন্দোলনের সময় পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার কয়েকজন আসামিও রয়েছেন। যদিও কোনো সাংগঠনিক ইউনিটে তাদের পদ দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, কিছু লোক দলে ঢুকেছে তবে তাদের কোনো পদে জায়গা দেয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: যুগান্তর